চট্টগ্রামে প্রথমার বইমেলা শুরু, চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
স্টলে সাজানো হরেক রকম বই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জীবনানন্দ দাশের বই যেমন আছে, তেমনি রয়েছে বর্তমান সময়ের মহিউদ্দিন আহমদ বা রায়হান রাইনের লেখা; একসঙ্গে এক টেবিলে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রথমা প্রকাশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম বইমেলায়’ কিংবদন্তি সব লেখকের বইয়ের সমাহার ঘটেছে। মেলায় সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।
দশমবারের মতো আয়োজিত এই বই উৎসবে এসেছিলেন কয়েক শ পাঠক-অনুরাগী। তালিকা ধরে কেউ কেউ কিনে নেন পছন্দের বই। এর মধ্যে বিকেল পাঁচটায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করা হয়। সুরের আবেশ আর প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে ওঠেন লেখক-পাঠকেরা।
উদ্বোধনী আয়োজনে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, নতুন বইয়ের প্রতি বিদগ্ধ পাঠকের প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে। পাঠকেরা ভিন্ন ধারার বই পড়তে পছন্দ করেন। পাঠকের সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্য প্রথমা প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করছে। ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। দল বেঁধে বইপ্রেমীরা মেলায় আসছেন। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের বই।
এবারও পাঠকদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে প্রথমা প্রকাশন। প্রথমার বইয়ে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। এ ছাড়া অন্য প্রকাশনীর বইয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে শত শত বই থরে থরে সাজানো। ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সাহিত্য, স্মৃতি, সাক্ষাৎকার, শিশু-কিশোর সাহিত্য; বিচিত্র ধারার নানা বই ঠাঁই পেয়েছে স্টলে স্টলে। পাঠকদের কেউ পাতা উল্টে পড়ছিলেন। কেউ বই কিনে ব্যাগে রাখছিলেন।
আবুল মনসুর আহমদের লেখা আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইটি কেনার পর আলোচনা জুড়ে দেন সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক প্রণবেশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নানা অধ্যায় বোঝার জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বইটি একবার পড়েছিলেন তিনি। তবে বইটি হারিয়ে ফেলেছেন। এখন বর্তমান রাজনৈতিক বাতাবরণে আরও একবার পড়ে দেখবেন। তাই কিনে নিয়েছেন।
আয়োজকেরা জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেলা চলবে প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। তবে শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসাইন বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর প্রথমা থেকে প্রকাশিত রাজনীতি, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের পাঠকদের মধ্যে জানার আগ্রহ আরও গাঢ় হয়েছে। এ কারণে মেলা প্রথম দিনেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
বই মানুষের সুহৃদ
মেলা পরিণত হয়েছিল আনন্দ আড্ডায়। কবি, লেখক ও পাঠকেরা সন্ধ্যায় গানে-গল্পে মেতে ওঠেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, নাট্যকার ও নির্দেশক রবিউল আলম, কবি অভীক ওসমান, কবি ওমর কায়সার, কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ, অধ্যাপক মশিউর রহমান, অধ্যাপক আজাদ বুলবুল, অধ্যাপক শামসুদ্দিন শিশির, লেখক জাহেদ মোতালেব, সাংবাদিক ডেইজি মওদুদ, কবি ফাওজুল কবীর, ফ্যাশন ডিজাইনার জোবাইদা আশরাফ, সুলতানা নূরজাহান, নাসরিন সরওয়ার, নূজহাত নূয়েরি, শিক্ষিকা সাকি জিনাত পারভিন প্রমুখ।
নাট্যকার ও নির্দেশক রবিউল আলম বলেন, বই মানুষের কাছের সঙ্গী। যখন কেউ থাকে না, তখন বই পাঠককে সঙ্গ দেয়। দোকানে গিয়ে কেনার চেয়ে মেলায় এসে বই কেনা বেশি আনন্দের। ফলে এ ধরনের মেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মেলার মাধ্যমে লেখক ও পাঠক কাছাকাছি আসতে পারেন। এতে ভাবের আদান-প্রদান হয়।
একটি স্টল থেকে একগুচ্ছ বই কিনে নেন সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস। মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্ধুর অনেকগুলো সংজ্ঞা রয়েছে। এর মধ্যে সুহৃদ ও মিত্র উল্লেখযোগ্য। জীবনের সমস্ত সংকটাপন্ন মুহূর্তে যাঁরা পাশে থাকেন, তাঁরাই হলেন সুহৃদ। বইও সুহৃদ। যখন কেউ বেদনায় জর্জরিত বা আনন্দে উল্লসিত হন, তখন পাশে কেউ থাকুক না থাকুক, বই থাকবে। আর বইমেলা হলো উৎসব। উৎসবের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকে।
অভীক ওসমান বলেন, এবারের বইমেলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমা সব সময় মানসম্মত বই প্রকাশ করে।
অধ্যাপক বিচিত্রা সেনও বইমেলা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অমর একুশে বইমেলার পর চট্টগ্রামে প্রথমা এত বড় আয়োজন করে চলেছে। বিচিত্র সব বই নিয়ে এবারও স্টল সাজানো হয়েছে। নতুন প্রজন্ম বইমুখী হলে সমাজ আরও এগিয়ে যাবে। ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।