দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় চট্টগ্রামে দুদক কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দুদকের কয়েকজন কর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক বলছেন, অসন্তোষ বিরাজের বিষয়টি কর্মীদের ব্যক্তিগত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার নগরের আগ্রাবাদে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সাত থেকে আটজন নিজের টেবিল ছেড়ে কার্যালয়ের নিচে দাঁড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছেন।
চট্টগ্রাম দুদকের বেশ কয়েকজন কর্মী বলেন, শরীফ উদ্দিন সততার সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কারও সঙ্গে আপস করেননি। কোনো ধরনের হুমকিতেও নিজের দায়িত্ব থেকে চুল পরিমাণ সরে দাঁড়াননি। এ রকম একজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা দুঃখজনক। তাঁর এই অপসারণ অন্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
গতকাল বুধবার থেকে চট্টগ্রাম দুদকের ২০ জনের বেশি কর্মী তাঁদের ফেসবুক প্রোফাইল কালো করে এ ঘটনার নীরব প্রতিবাদ জানান।
এদিকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন তাঁর সহকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, শরীফ উদ্দিন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার থেকে চট্টগ্রাম দুদকের ২০ জনের বেশি কর্মী তাঁদের ফেসবুক প্রোফাইল কালো করে এ ঘটনার নীরব প্রতিবাদ জানান।
চট্টগ্রামে কর্মীদের অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজে এখন অফিসে কাজ করছি। অন্যরাও করছেন। কর্মবিরতি কিংবা কাজে যোগ না দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে কারও অসন্তোষ থাকলে সেটি যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। অফিশিয়ালি আমরা কাজ করছি। কোনো অসুবিধা নেই।’
গতকাল দুদক পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক চিঠিতে এই অপসারণ করা হয়। তবে কী কারণে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়েছে, তা চিঠিতে উল্লেখ নেই।
আমি নিজে এখন অফিসে কাজ করছি। অন্যরাও করছেন। কর্মবিরতি কিংবা কাজে যোগ না দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে কারও অসন্তোষ থাকলে সেটি যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। অফিশিয়ালি আমরা কাজ করছি। কোনো অসুবিধা নেইদুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান
পটুয়াখালীতে গত বছরের ১৬ জুন বদলির আগে শরীফ দুদক চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তাঁর বদলি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল।
দুদক সূত্রে জানা যায়, শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার করায় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা, অবৈধ গ্যাসসংযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. আলী চৌধুরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম–কক্সবাজার হাইওয়েসংলগ্ন বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই কার্যালয় নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিয়ে মামলার সুপারিশ করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রেলসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ঘটনার তদন্তে ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাদের নাম থাকায় আলোচনায় ছিলেন শরীফ। নাম উঠে আসায় আলোচনায় থাকেন শরীফও।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন আমরা বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়; এখন দুদকে দেখলাম। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন শরীফ। এ কারণে তাঁকে প্রভাবশালীরা কৌশলে সরিয়ে দিয়েছেন।’ শরীফকে অপসারণের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন আখতার কবির চৌধুরী।