ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না মোংলা ও বুড়িমারীতে: টিআইবি
মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে ঘুষ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। সব নথিপত্র ঠিকঠাক থাকার পরেও একেকটি গাড়ির শুল্কায়নে মোংলা কাস্টমস হাউসের ছয়টি বিভাগে ৪ হাজার টাকা এবং সেই গাড়ি ছাড় করতে বন্দরের ১০টি স্থানে ১ হাজার ৭১৫ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
টিআইবির গবেষণা বলছে, কেবল গাড়ি নয়, দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা দিয়ে যে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয় ব্যবসায়ী কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিদের। আমদানি পণ্যের প্রতি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেই পণ্য বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাড় করতে হলে ৬ হাজার টাকা এবং এর পরে ছাড় করতে হলে বাড়তি ১ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া বন্দরে প্রতিটি জাহাজ আগমন ও বহির্গমনে কাস্টমস হাউসে ৮ হাজার ৩৫০ টাকা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
মোংলার পাশাপাশি বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নিয়েও গবেষণা করেছে টিআইবি। সেখানেও পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন বা ঘুষের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির গবেষকেরা। এখানে আমদানি পণ্যের প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানির বেলায় এটি দেড় হাজার টাকা। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানিতে এই ঘুষ ২০০ টাকা।
‘মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউস এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন: আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন টিআইবির কর্মকর্তা মনজুর ই খোদা ও মো. খোরশেদ আলম।
দেশে আমদানি হওয়া গাড়ির ৬০ শতাংশ মোংলা বন্দর দিয়ে আসে। এ ছাড়া ক্লিনকার, সার, কয়লা, এলপি গ্যাস আমদানি করা হয় এই বন্দর দিয়ে। রপ্তানি হয় চিংড়ি, পাট, সিরামিক ইত্যাদি পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছর মোংলা বন্দর ২২৭ কোটি টাকা ও মোংলা কাস্টমস ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা আয় করে। অন্যদিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে বোল্ডার, সবজিবীজ, ভুট্টা, পেঁয়াজ ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়। তবে আমদানি পণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পাথর। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মোংলা বন্দর ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগসাজশে ও বলপূর্বক দুর্নীতি হচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও দাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কমানো গেলে দুর্নীতি কমে যায়। তবে সেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে সুফল পাওয়া যায় না।’