ঘাটে বসে থাকার দিন ফুরাবে
দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশের যাতায়াতে নৌপথের ওপর ভরসা রাখতে হয়। লঞ্চ তো আছেই, এ অঞ্চলে সড়কে চলতে হলেও ফেরির বিকল্প ছিল না এত দিন। ফেরির অপেক্ষায় কতক্ষণ ঘাটে বসে থাকতে হতো, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ভাগ্য ভালো থাকলে ফেরির দেখা মেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। গাড়ির চাপ বাড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় দীর্ঘায়িত হয় যাত্রাপথের দুর্ভোগ।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাশিদা বেগম (৪০)। তাঁর বাড়ি বরগুনা সদরের কলেজ রোডে। বিশেষ প্রয়োজনে বাড়িতে যাওয়ার দরকার হলে চিন্তায় থাকতে হতো বাড়িতে গেলে যথাসময়ে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবেন কি না।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে কথা হয় রাশিদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। আমাদের সব কষ্টের শেষ হচ্ছে। ঘাটে এসে আর অপেক্ষা করতে হবে না। আর সেতু পাড়ি দিয়ে যখন-তখন বাড়িতে যাব।’
সাধারণ সময়ে গাড়ি ফেরিতে ওঠার পর নদী পার হতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার মতো। যানবাহনের চাপ, কুয়াশা-ঝড়, বন্যা, নদীতে নাব্যতাসংকট ইত্যাদি সমস্যা লেগেই থাকে। কখনো ডুবোচরে ফেরি আটকা পড়ে, ঘাট বন্ধ থাকা, স্রোতের বিপরীতে ফেরি চলতে না পারা, ফেরির সংখ্যা কম, দুর্বল ফেরি ও সঠিকভাবে ড্রেজিং না করার কারণে পারাপারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
যানবাহন ফেরিতে উঠতেই দীর্ঘ সময় লাগে। ঘাটেই কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ সিরিয়ালে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক ও সেই সঙ্গে শতাধিক ছোট গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তিন-চার দিন ধরে অপেক্ষায় থেকে ফেরিঘাটে পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়। পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও তাঁদের সহকারীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি।
ট্রাকচালক আবদুর রহমান বলেন, পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে কখনো কয়েক দিন ঘাটে বসে থাকতে হয়েছে। সেতু চালুর পর তাঁর মতো এই নৌপথ ব্যবহারকারী চালক-শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে যাত্রীদের মতো দুর্ভোগের শিকার হন পরিবহনের চালকেরাও। গ্রিনলাইন পরিবহনের চালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘যানবাহনের চাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই ফেরি চলাচল ব্যাহত হতো। বিরক্ত হয়ে যাত্রীরা মাঝেমধ্যে বাস থেকে নেমেও যেতেন। এক ট্রিপ (যাওয়া–আসা) শেষ করতে দুই থেকে তিন দিন লাগত। সেতু চালুর পর সে কষ্ট আর থাকবে না।