গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট চলছে, ভোটার উপস্থিতি কম
একাদশ জাতীয় সংসদের স্থগিত হয়ে যাওয়া গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী) আসনে আজ রোববার ভোট নেওয়া হচ্ছে। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। সকালে দুই উপজেলার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে।
আসনটিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ফজলে রাব্বী চৌধুরী গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মারা যান। এ কারণে এই আসনে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ফজলে রাব্বী চৌধুরীর মৃত্যুর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল ঘোষণা করে। পুনঃতফসিল অনুযায়ী, গাইবান্ধা-৩ আসনে আজ রোববার (২৭ জানুয়ারি) ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আসনটিতে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের ইউনুস আলী সরকার, জাতীয় পার্টির (জাপা) দিলারা খন্দকার শিল্পী, জাসদের এস এম খাদেমুল ইসলাম, এনপিপির মিজানুর রহমান ও স্বতন্ত্র আবু জাফর মো. জাহিদ।
আজকের নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াত কোনো প্রার্থী দেয়নি। জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু ‘ভোট কারচুপি ও অনিয়মের’ আশঙ্কায় গত ১০ জানুয়ারি তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আজ আসনটির দুই উপজেলার ১৩২টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট চলছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট চলছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আজ সকালে দুই উপজেলার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি কম। কিছু কিছু কেন্দ্রে সামান্যসংখ্যক ভোটার সারিবদ্ধভাবে ভোট প্রদান করছেন। কিছু কেন্দ্র ফাঁকা, ভোটারদের উপস্থিতি নেই। দু-একজন করে এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সকাল নয়টায় পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি নেই। নিরাপত্তাকর্মীরা বসে আছেন। বিদ্যালয়ের মাঠ ফাঁকা। কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৪ হাজার ৯০২ জন। সকাল নয়টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে প্রায় ১০০টি।
কেন্দ্রটিতে ভোট দিতে আসা ভোটার বিপ্লব ইসলাম বলেন, ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এ ছাড়া এখন জমিতে বোরো রোপণ চলছে। গ্রামের মানুষ জমিতে কাজ করছেন। নারীরা রান্নার কাজে ব্যস্ত। তাই কেন্দ্রে ভোটার কম।
ভোট দিতে আসা আরেক ভোটার কুদ্দুস মিয়া বলেন, তাঁর ভোট দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। বাড়িতে কাজ পড়ে আছে। তবুও প্রার্থীর লোকের চাপাচাপির কারণে ভোট দিতে এসেছেন তিনি।
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল্যাহিস শাফি বলেন, শীতের কারণে সকালে উপস্থিতি কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়বে।
সকাল পৌনে ১০টায় সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের সাদুল্যাপুর কে এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কিছু ভোটার সারিবদ্ধভাবে ভোট দিচ্ছেন। এখানে মোট ভোটার ৩ হাজার ২৩২ জন। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে প্রায় ১০৫টি।
কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা জিল্লুর রহমান বলেন, ভোট দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব। তাই সকালেই ভোট দিতে এসেছেন।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, সকালে উপস্থিতি কম। কিন্তু পরে বাড়বে।
সাদুল্যাপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এখানে নারী ভোটারদের সারি দেখা যায়। কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৪ হাজার ৩৩৫ জন। সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ২১১টি।
কেন্দ্রটিতে ভোট দিতে আসা গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, সকালে ভোট দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসবেন তিনি। যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা সকালেই ভোট দিতে এসেছেন। অনেকে জমিতে কাজ করে দুপুরে ভোট দিতে আসবেন।
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মণ্ডল বলেন, হয়তো কাজের কারণে সকালে উপস্থিতি কম। কিন্তু পরে উপস্থিতি বাড়বে।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুই উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ পুলিশ, ২০ প্লাটুন বিজিবি, ৮ প্লাটুন র্যাব ও ১ হাজার ৫৮৪ জন আনসার-ভিডিপির সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
আসনটির ১৩২টি কেন্দ্রে ১৩২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ১৫৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৮৫৪ জন।