গভর্নর নিয়োগের নীতিমালা নেই, সরকারের পছন্দই সব
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তখনো নতুন গভর্নর কে হবেন ঠিক করা হয়নি। দুই সাবেক আমলার নাম বলা হলো। বেছে নেওয়া হলো একজনকে। আতিউর রহমানের পদত্যাগের এক ঘণ্টার মধ্যেই অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে নতুন গভর্নরের নাম বলে দিলেন।
বাংলাদেশে এভাবেই গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গভর্নরের নিয়োগ নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই এখানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হতে হলে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, তা–ও কোথাও উল্লেখ নেই। আইনে কেবল বলা আছে, সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দেবে। ফলে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ীই নিয়োগ দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ এই পদে।
দেশের মুদ্রা সরবরাহ কত হবে, টাকার মান কতটা বাড়বে, মূল্যস্ফীতির হার কত রাখা হবে—এ সবই ঠিক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। এর সঙ্গে জড়িত আছে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাপনের মান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল ব্যক্তিটিকে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং কী যোগ্যতা থাকতে হবে, তা প্রায় দেশই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
উন্নত দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংেক গভর্নর নিয়োগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। যেমন কানাডার আইনে লেখা আছে যে গভর্নরের অবশ্যই আর্থিক বাজার ও অর্থনীতি নিয়ে সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও অর্থায়নব্যবস্থা নিয়েও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আবার বেশির ভাগ দেশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলেও প্রায় সবাই আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিকে বেছে নেয়। কোনো দেশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদের জন্য রাজনৈতিক পরিচয় বা সমর্থনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকেই বিবেচনা করা হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদের জন্য প্রধানত তিন ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দরকার। যেমন অস্ত্রশাস্ত্রের জ্ঞান, ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা। তবে কোনো গভর্নরের মধ্যে তিন গুণেরই সমন্বয় আছে—এমন নজির বিশ্বে সাধারণত দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেন আকবর আলি খান। তিনি বলেন, এমন কোনো সাধারণ বক্তব্যে পৌঁছানো যাবে না যে কোন ধরনের লোকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়া উচিত। তবে গভর্নরের ব্যক্তিগত গুণাবলির মধ্যে অবশ্যই সমস্যা সমাধানের মনোবৃত্তি এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের জন্য অর্থ ও ব্যাংকশাস্ত্রের জ্ঞান থাকা জরুরি। ব্যাংক খাতের বাস্তবিক জ্ঞান না থাকলে শাস্ত্রীয় জ্ঞান হলেও থাকতে হবে গভর্নরের। তবে গভর্নরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তা হচ্ছে সততা, নীতিনিষ্ঠ ও স্বাধীনচেতা মনোভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষে স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে চলা সম্ভব কি না জানতে চাইলে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এলে পদত্যাগ তো করা সম্ভব। দুই-একজন পদত্যাগ করে উদাহরণ তৈরি করলে সরকারগুলো তখন হস্তক্ষেপ করতেই ভয় পেত।’
১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠন করেছিল। ১৯৯৯ সালে সেই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের তালিকা তৈরির জন্য একটি জাতীয় ব্যাংকিং উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের সুপারিশ করা ছিল। তবে এসব পদের জন্য কী ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন তা বলা ছিল না সুপারিশে। কমিটি গভর্নরের সর্বোচ্চ মেয়াদ পাঁচ বছর এবং তা আর না বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। পাশাপাশি গভর্নরের পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের সমান করার কথাও বলা হয়েছিল। সরকার এর কোনোটাই মানেনি।
ব্যাংক সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি অনেক বদল হয়েছে। সেটি মাথায় নিয়েই প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এখনকার বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্ণধার যিনি হবেন তাঁকে আগের থেকেও অনেক বেশি দক্ষ হতে হবে এবং তাঁর নানামুখী যোগ্যতা থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরকে বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে, অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান থাকতে হবে, প্রশাসনিক যোগ্যতা থাকতে হবে। সর্বোপরি প্রয়োজন বড় মাপের ব্যক্তিত্বেরও।
এ রকম লোক যে খুব বেশি পাওয়া যাবে না, এটাও জানেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তাই তিনি মনে করেন, গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে দলীয় আনুগত্য বিচার করলে এ ধরনের মানুষ খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হবে। সার্চ কমিটির কথা অনেকে বলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তো রাজনীতিকীকরণ হয়। এর চেয়ে গভর্নরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকাশ্য শুনানি করা যেতে পারে। এই শুনানির জায়গা হলো সংসদ। এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই করে। এটা ঠিক যে আমাদের মতো দেশে সরকারের নিয়োগের বিরোধিতা সংসদে করা হয়তো হবে না। তারপরও এর একটি লাভ আছে। যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত এ সময় জানা যায়। আমরা যাঁদের নিয়োগ দিই তাঁদের পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত কি সবাই জানে। এ থেকেও তো একটা মানুষের যোগ্যতা বুঝতে পারা যায়।
আইনে যা আছে: বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী। এখানে বলা আছে, সরকার গভর্নর পদে নিয়োগ দেবে এবং এর মেয়াদ হবে চার বছর। সরকার চাইলে মেয়াদ বাড়াতে পারবে। তবে বয়স হতে হবে ৬৫ বছরের মধ্যে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার জন্য রয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৪। এখানেও বলা আছে যে কেন্দ্রীয় সরকার গভর্নর নিয়োগ দেবে। গভর্নরের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর এবং নবায়ন করা যাবে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত হয় দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুযায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার আর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান অ্যাক্টের মধ্যে ভাষাগত পার্থক্য খুবই কম। গভর্নর নিয়োগ পদ্ধতিও এক। তবে পাকিস্তানে গভর্নরের মেয়াদ তিন বছর এবং মেয়াদ আরও একবার বাড়ানো যায়।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত হয় মনিটরি ল অ্যাক্টের মাধ্যমে। এখানেও বলা আছে, প্রেসিডেন্ট গভর্নরকে নিয়োগ দেবেন। আইনে গভর্নরের কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন তার কোনো উল্লেখ না থাকলেও কী কী কারণে অযোগ্য হবেন তা বলা আছে। যেমন জনপ্রতিনিধি কেউ গভর্নর হতে পারবেন না। এ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক, অংশীদার বা কর্মকর্তা হলেও তিনি গভর্নর হতে পারেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বাংলাদেশে গভর্নর নিয়োগের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। আন্তর্জাতিক প্রবণতা অনুযায়ীও হচ্ছে না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কাকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তা দেখার কোনো সংস্থা এখানে নেই।
সরকার কি যোগ্য ব্যক্তি পায় না—এমন প্রশ্ন করা হলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, যোগ্য লোক আছে। কিন্তু সরকার খোঁজে আজ্ঞাবহ লোক। দক্ষতা, অভিজ্ঞতার পরিবর্তে সরকার খোঁজে আগে নিজেদের লাইনের লোক। আর, এই ফাঁকেই অনেক ভুল লোক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে যান।
কারা গভর্নর হন: পাশের দেশ ভারতেও একসময় গভর্নর পদে আমলাদের প্রাধান্য ছিল। তবে সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা মূলত বিদেশে ব্যাংকিং খাতে কাজ করার অভিজ্ঞদেরই গভর্নর পদের জন্য খুঁজে নিয়েছে। এমনকি দ্বৈত নাগরিকদেরও গভর্নর করার উদাহরণ রয়েছে।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) এখনকার গভর্নর রঘুরাম রাজনকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা গভর্নর। সবচেয়ে কম বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ হয়েছিলেন। তাঁকে আইএমএফের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে মনে করা হয়। কংগ্রেস সরকার তাঁকে গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ছাড়েননি। বিশ্বজুড়ে রঘুরাম রাজনকে ব্যাংকিং খাতের একজন অন্যতম বিশেষজ্ঞ বলে মানা হয়।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আশরাফ মাহমুদ ওয়াত্রা। তিনি মূলত ব্যাংকার। ৩৫ বছর তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে কাজ করেছেন। বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাংকার তিনি। গভর্নর নিয়োগের আগে তিনি ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। হাবিব ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি একসময় বাংলাদেশেও ছিলেন।
অর্জুনা মহেন্দ্র শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর। তিনি তামিল বংশোদ্ভূত হলেও থাকতেন সিঙ্গাপুরে। এইচএসবিসি ব্যাংকে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে তিনি একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগে সবচেয়ে বৈপ্লবিক কাজটি করেছে ইংল্যান্ড। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সময় পর্যন্ত মার্ক কার্নে ছিলেন ব্যাংক অব কানাডার (কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গভর্নর। তিনি একজন বিনিয়োগ ব্যাংকার এবং কানাডার নাগরিক। ২০০৭-০৮ সময় থেকে যে বিশ্বমন্দার শুরু, তা থেকে কানাডাকে সফলভাবে রক্ষা করেছেন বলে মার্ক কার্নের খ্যাতি রয়েছে। কেবল এই বিবেচনায় ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর একজন কানাডার নাগরিক।
আমলার কাছে প্রত্যাবর্তন: বাংলাদেশে ৪৫ বছরে এখন পর্যন্ত ১১ জন গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম গভর্নর একজন ব্যাংকার হলেও বাকিদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন আমলা। আর সর্বশেষ গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন সাবেক আমলাকে। অর্থাৎ আবার সেই আমলার কাছেই ফিরে গেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর ছিলেন আ ন ম হামিদুল্লাহ (১৯৭২-৭৪)। তিনি এর আগে পাকিস্তানের ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের (পরে এটি উত্তরা ব্যাংক হয়েছে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এ কে নাজিরউদ্দীন আহমেদ ছিলেন গভর্নর। তিনি স্টেট ব্যাংক পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করেছেন।
১৯৭৬ সাল থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে গভর্নর ছিলেন এম নূরুল ইসলাম। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এম নূরুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম আমলা গভর্নর। তিনি পাকিস্তান সেন্ট্রাল সার্ভিস কমিশনের (সিএসপি) কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর পরের গভর্নর ছিলেন আরেক আমলা শেগুফ্তা বখ্ত চৌধুরী (১৯৮৭-৯২)। তিনি কর ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর গভর্নর হন এম খোরশেদ আলম (৯২-৯৬)। তিনিও সিএসপি ছিলেন।
এরপরে গভর্নর হন লুৎফর রহমান সরকার (১৯৯৬-৯৮)। তিনি একজন ব্যাংকার ছিলেন। এরপরের গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন (১৯৯৮-২০০১) অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন, আবার আমলাও ছিলেন। অষ্টম গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদও (২০০১-২০০৫) একাধারে অর্থনীতির শিক্ষক, আমলা এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও (২০০৫-২০০৯) তাই। আতিউর রহমান (২০০৯-১৬) একজন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক। আর বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির একজন সাবেক আমলা। সর্বশেষ অর্থসচিব ছিলেন।
পরিচালনা পর্ষদে কারা: বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনার জন্য ৯ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। পদাধিকার বলে গভর্নরই পর্ষদের চেয়ারম্যান হন। সদস্য হিসেবে থাকেন ডেপুটি গভর্নর। এর বাইরে অর্থসচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে সদস্য হন। বাকি চারজনকে নেওয়া হয় সরকারের বাইরে থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কমিটি পরিচালনা পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তা কমিয়ে এক বা সর্বোচ্চ দুজন রাখার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তা আছেন মাত্র একজন। পাকিস্তানেও তা-ই। বলা যায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তা-ই। আর ওই সব দেশে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নেওয়া হয় মূলত বিশেষজ্ঞদের। অথচ বাংলাদেশে ৯ সদস্যের ৫ জনই সরকারের প্রতিনিধি। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেসরকারি সদস্যদের ভূমিকা থাকে খুবই কম।