গতিময় আ. লীগ, পিছিয়ে অন্যরা
>• পাবনার পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫ জন প্রার্থী
• গণসংযোগ, মাইকিং, পোস্টার, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ-কোনো কিছুরই কমতি নেই
• স্থানীয়ভাবে এই দুজনেরই নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে
পাবনার পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই জোরেশোরে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণসংযোগ, মাইকিং, পোস্টার, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ—কোনো কিছুরই কমতি নেই। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বলছেন, হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কারণে তাঁরা প্রচার–প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছেন।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সদ্য গণফোরামে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। স্থানীয়ভাবে এই দুজনেরই নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। তবে প্রচার–প্রচারণায় এগিয়ে শামসুল হক।
আবু সাইয়িদের অভিযোগ, প্রচারের শুরু থেকেই তিনি বাধার মুখে পড়ছেন। তাঁর গাড়িতে হামলা হয়েছে।
কোথাও কর্মসূচি দিলে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক মামলা দিয়ে তাঁর সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন চলছে। এ কারণে তিনি ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারছেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামসুল হক। তিনি বলেন, জামায়াতকে ল্যাং মেরে আবু সাইয়িদ ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ায় জামায়াতের একাংশ ক্ষুব্ধ। তারাই তার ওপর হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন নিয়ে ভোট করায় স্থানীয় ভোটাররা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ কারণে তিনি নিশ্চিত পরাজয় জেনে পিছিয়ে পড়ছেন।
এ আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আবদুল মতিন, এনপিপির শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুলহাস নাইন ও স্বতন্ত্র মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান।
পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ ফিরোজ কবির। তিনি এ আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা প্রয়াত আহম্মেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন। ফলে প্রচারের শুরু থেকেই মাঠ গরম করে রেখেছেন।
ফিরোজ কবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও এই আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম রেজা হাবিব। প্রচার–প্রচারণায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে পিছিয়ে। সেলিম রেজার অভিযোগ, শুরু থেকেই প্রচারণায় বাধা আসছে। পোস্টার লাগালে ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে। মামলা দিয়ে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। ফলে প্রচার চালানো দূরের কথা, তিনি বেরই হতে পারছেন না।
এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন ফিরোজ কবির। তিনি বলেন, সেলিম রেজা দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না। ফলে দলীয় বিশৃঙ্খলাতেই তিনি পিছিয়ে পড়েছেন।
এ আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আলী ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের শামসুর রহমান।
পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মকবুল হোসেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির সাবেক সাংসদ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। এই দুজনের প্রচার–প্রচারণাও চলছে সমানতালে। তবে গত বুধবার রাতে চাটমোহরে যুবলীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ও বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁরা নৌকার পক্ষে মিছিল করছিলেন। মিছিলটি বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি পার হওয়ার সময় তাঁদের লক্ষ্য করে পরপর চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে পাল্টা অভিযোগ তুলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বলেন, তাঁরা (যুবলীগ) নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপির ঘাড়ে দোষ দিচ্ছেন। ককটেল বিস্ফোরণের অজুহাতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ আসনে বিএনপির মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসানুল ইসলাম। তিনি দলের কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আবদুল মোত্তালিব, গণতন্ত্রী পার্টির খায়রুল আলম।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান। শুরু থেকেই প্রচার–প্রচারণা জমিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিপরীতে ঝিমিয়ে প্রচারণা চলছে বিএনপির। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, প্রচারে বাধা আসছে। রাতে পোস্টার সাঁটালে দিনে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের। তাঁরা বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। ফলে তাঁরা ঝিমিয়ে পড়েছেন।
এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন এনপিপির আবদুর রশিদ শেখ ও ইসলামী আন্দোলনের আবদুল জলিল।
পাবনা-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সাংসদ গোলাম ফারুক। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন। তাঁর প্রতীক ধানের শীষ।
প্রচারণার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে পুরো মাঠ। সবদিক থেকেই এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। প্রচারের পাশাপাশি প্রতিদিন উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।
অন্যদিকে দলীয় প্রার্থী না পেয়ে ঝিমিয়ে আছে বিএনপি। ফলে মাঠ জমাতে পারেননি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। পোস্টার তেমন নেই। মাঝেমধ্যে মাইকিং করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের আশা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হবেন। তা না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এরপরও তাঁরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুকে কষ্ট চেপে রেখে কাজ করছেন।
এ আসনে জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের খান, এনপিপির আবু দাউদ ও ইসলামী আন্দোলনের আরিফ বিল্লাহও প্রার্থী। অন্য দুজনের তেমন প্রচারণা না থাকলেও আরিফ বিল্লাহ ভালোই প্রচারণা চালাচ্ছেন।