২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশে অঙ্গীকার জোরদার করা ঢাকায় মার্কিন অগ্রাধিকার

গত ৫০ বছরের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারত্ব জোরদার করতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার জোরালো করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রমমান ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও মহামারি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতায় আগ্রহী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা রাষ্ট্রভিত্তিক সমন্বিত কৌশল বা আইসিএসে বাংলাদেশ নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে উল্লেখিত আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অবদানে সক্ষমতা বাড়ানো এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সহায়তার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে আইসিএসে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৮০টি দেশ এবং ভিয়েনা, রোম ও জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের ৩টি মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে মিলে রাষ্ট্রভিত্তিক সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করে থাকে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, একটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ওই দেশে কর্মরত মার্কিন মিশন প্রধান লক্ষ্য ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আইসিএস বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশবিষয়ক সর্বশেষ আইসিএস এ বছরের ৮ এপ্রিল অনুমোদন করা হয়েছে। এটি জুন মাসে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে বাংলাদেশ নিয়ে সর্বশেষ আইসিএস প্রকাশ করেছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রভিত্তিক সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করলে তা নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা করে না। ওই কৌশল চূড়ান্ত হওয়ার পর তা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের মতো বাংলাদেশ–সম্পর্কিত সর্বশেষ আইসিএস বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু এটা তাদের একটি প্রকাশিত দলিল, এটি দেখে বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা তাদের অবস্থান বুঝতে পারি। তাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। তাদের চাওয়ার সঙ্গে আমাদের মিল এবং অমিলের বিষয়গুলো এ ধরনের দলিল থেকে বুঝতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব আলোচনা হয়, সেখানে তারা এগুলোই (নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রসঙ্গে) বলে। ফলে, এটিকে ইতিবাচক আলোচনার জন্য সহায়ক হিসেবে দেখা যায়।’

আরও পড়ুন

ঢাকায় মিশন প্রধানের চার অগ্রাধিকার

বাংলাদেশ–সম্পর্কিত ২১ পৃষ্ঠার আইসিএস মিশন প্রধানের অগ্রাধিকার, মিশনের কৌশলগত রূপরেখা, মিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মিশনের ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় মার্কিন মিশন প্রধানের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার জোরালো করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ অধিকতর গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে নাকি আরও বেশি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নড়বড়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল এবং বহুমতের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা জরুরি। ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার সুনির্দিষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তারই অংশ। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মৌলিক নাগরিক অধিকারের ওপর বিধিনিষেধের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে তরুণ, নারী, শ্রমিক, তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুন

সমন্বিত মার্কিন কৌশলে ঢাকায় মিশন প্রধানের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের শ্রমমান ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও মহামারি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বাইরে পণ্যের ভবিষ্যৎ বাজার ও বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা, ব্যবসা পরিচালনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ এবং কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ও অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক চর্চা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কিছু প্রতিযোগী দেশ। কাজেই অর্থনৈতিক ওই সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রম খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে অব্যাহত দুর্নীতি দূর করা, প্রক্রিয়াগত বিষয়ের সমাধান করতে হবে।

আরও পড়ুন