খায়রুজ্জামানকে হস্তান্তরে মালয়েশিয়ার আদালতের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা
সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার একটি আদালত। মালয়েশিয়ার একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি আদালত গত শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞা দেন। খায়রুজ্জামানের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন।
খায়রুজ্জামানের পক্ষে করা রিটের ওপর কবে শুনানি হবে, তা কাল সোমবার নির্ধারণ করতে পারেন কুয়ালালামপুরের আদালত।
খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এ এস ঢালিওয়াল ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল (খায়রুজ্জামান) একজন রাজনৈতিক শরণার্থী। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচিআর) কার্ডধারী। তিনি কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেননি। তাঁকে আটক করা বেআইনি। তাঁর বৈধ ভ্রমণ নথিপত্র আছে। তিনি মালয়েশিয়ায় কোনো কাজ করছিলেন না। তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁকে বহিষ্কার করার অধিকার মালয়েশিয়ার নেই।
খায়রুজ্জামানকে গত বুধবার দেশটির সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে অভিবাসন পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে পরে সামরিক সরকারের আমলে প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে কূটনীতিক হন খায়রুজ্জামান। তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন পুত্রজায়ায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ রয়েছে খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে। দেশটির অনুরোধে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিধি মেনেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ মিশনকে জানিয়েছে, দেশটির অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কাজ করছে।
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। তাঁকেও সেখানে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনকে জানানো হয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খায়রুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির পর গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে খায়রুজ্জামান জামিনে মুক্তি পান। এরপর চাকরি ফিরে পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি।
২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলা থেকে খালাস পান খায়রুজ্জামান। ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পান। পরে ২০০৭ সালে সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় তৎকালীন বাংলাদেশি হাইকমিশনার খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ অগ্রাহ্য করে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান।
প্যারিসভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের (এফআইডিএইচ) তথ্য অনুযায়ী, খায়রুজ্জামান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচিআর) নিবন্ধিত শরণার্থী।