পিলখানা হত্যা মামলা
খালাস পাওয়া চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পেয়েছে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ। একটি লিভ টু আপিলে পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৫০ হাজারের বেশি।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাস পাওয়া চারজনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারিক আদালতের রায়ে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এই চারজনসহ উচ্চ আদালতে খালাস ও সাজা কমে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আপিল করার প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল করা হতে পারে।
হাইকোর্টে খালাস পাওয়া চারজন হলেন হাবিলদার মো. খায়রুল আলম, নায়েব সুবেদার আলী আকবর, হাবিলদার বিল্লাল হোসেন ও সিপাহি মেজবাহ উদ্দিন (পলাতক)। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। উচ্চ আদালতের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ও সাজা কমেছে—এমন দণ্ডিতের ক্ষেত্রে আপিল করা হবে, যার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়সহ একটি লিভ টু আপিলে পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৫০ হাজারের বেশি। এই আপিলের ১০টি করে কপি তৈরি করতে হচ্ছে। এত অধিক পৃষ্ঠার আপিল এর আগে দায়ের হয়নি। এই আপিলের কাগজপত্র দিয়ে অন্যান্য আপিল শুনানির জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হবে। বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, তবে হাইকোর্টে খালাস পাওয়া চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করেছে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। উচ্চ আদালতের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ও সাজা কমেছে—এমন দণ্ডিতের ক্ষেত্রে আপিল করা হবে, যার প্রস্তুতি চলছে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। সেদিন ঢাকার পিলখানায় (বিজিবি সদর দপ্তর) নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বরে হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।
হত্যা মামলার ৮৪৬ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় আর খালাস পান ২৭৮ জন। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া ৬৯ জনের ক্ষেত্রে পৃথক আপিল করে। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।
বিচারিক আদালতে ও হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এমন ৩২ জন এবং ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ২১ জন, ৭ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ৫ জন, ১৩ বছরের সাজা থেকে খালাসপ্রাপ্ত একজন ও ছয় বছরের সাজা থেকে খালাসপ্রাপ্ত একজনের ক্ষেত্রে আপিল করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের তথ্যমতে, ওই চারজন ছাড়া মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আটজন ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত থেকে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা নিয়ে আলোচনা আছে। বিচারিক আদালতে ও হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এমন ৩২ জন এবং ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ২১ জন, ৭ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ৫ জন, ১৩ বছরের সাজা থেকে খালাসপ্রাপ্ত একজন ও ছয় বছরের সাজা থেকে খালাসপ্রাপ্ত একজনের ক্ষেত্রে আপিল করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা সাবেক ডিএডি সৈয়দ তৌহিদুল আলমসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫০ জনের বেশি আসামির পক্ষে হাইকোর্টে আইনজীবী ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়, হাইকোর্টের রায়, আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ আপিলের পেপারবুকের (মামলার বৃত্তান্ত) পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ। একটি আপিলের কাগজপত্র দিয়ে অন্যান্য আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে।