‘মাছ-মাংসকে যে এত ছোট টুকরো করা যায়, তা হলের ডাইনিংয়ের খাবার না খেলে বুঝতাম না। ডাল আর ময়লা পানির মধ্যে অনেক সময় পার্থক্য করা যায় না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের খাবার নিয়ে এই মন্তব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ইফরান আজিজের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলগুলোর ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। করোনার আগে ডাইনিংয়ের প্রতি বেলার কুপন ২০ টাকা করে থাকলেও করোনার পরে হলভেদে প্রতি বেলার খাবারের কুপনের মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুপনের দাম বাড়লেও খাবারের মান বাড়েনি। ডাইনিংয়ে যে ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়, তাতে পুষ্টির চাহিদা পূরণ তো দূরের কথা, ক্ষুধাই নিবৃত্ত হয় না। মোটা চালের ভাত, মুরগি বা মাছ এত ছোট করে টুকরা করা হয়, যার চেয়ে ছোট করা সম্ভব নয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর দিনে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার কিলোক্যালরি শক্তিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৮২১ কিলোক্যালরি শক্তিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পান অর্থনীতি বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক রায়হান। এই চিত্রের বদল হয়নি বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
আবাসিক হলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলের ডাইনিংয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা থাকলেও এখন তা দেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থীদের কুপনের টাকা থেকেই খাবার সরবরাহ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা তিন বেলা খাবারের জন্য ১৬টি আবাসিক হলের ডাইনিং ছাড়াও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, প্রতিটি হলের নিজস্ব ক্যানটিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার খাবারের দোকানের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের ডাইনিংগুলোতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন না করায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বটতলাসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানের শরণাপন্ন হন। এসব খাবার অস্বাস্থ্যকর হলেও নিরুপায় শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া পরিচালিত হয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) আওতায়। খাবারে কোনো ভর্তুকি না দেওয়া হলেও ক্যাফেটেরিয়ার কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত বেতনে চাকরি করেন। তবু এখানকার খাবারের গুণমান নিয়ে অভিযোগ আছে শিক্ষার্থীদের।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের যে দাম রাখা হয়, তাতে অনায়াসে আরও ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা সম্ভব। আমরা বারবার বলার পরও এর কোনো সুরাহা হয়নি।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হল ডাইনিং ছাড়া বাইরের দোকানে যে দামে খাবার বিক্রি হয়, অনেকের পক্ষেই তিন বেলা সেই দামে খাওয়া সম্ভব হয় না। এসব দোকানের খাবারের মানও ঠিক থাকে না, পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন ৭০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসার জন্য যান। তাঁদের মধ্যে ২০ শতাংশ পেটের সমস্যায় ভোগেন বলে জানান চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক রিজওয়ানুর রহমান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত তেল-মসলা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া খাবারের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দা ফাহলিজা বেগম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ডাইনিংয়ে খান। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যদি বেশি হতো তাহলে খাবারের মান বাড়ত। খাবারের পুষ্টিমান নিশ্চিতে আমরা প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয় করার চেষ্টা করব।’