কাস্টমার সার্ভিস নম্বর ক্লোন করে গ্রাহকদের ৫৫ লাখ টাকা সরিয়েছেন তাঁরা
সংঘবদ্ধ ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৯০ জন গ্রাহকের ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে লংকাবাংলার কাস্টমার কেয়ারের নম্বর ক্লোন করে কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে গ্রাহককে বলেন, তাঁর ক্রেডিট কার্ডটি ব্লকড হয়ে গেছে। ক্রেডিট কার্ড সচল করতে মুঠোফোনে খুদে বার্তা কিংবা ই–মেইলে পিন নম্বর যাবে। সেই পিন নম্বর তাদের জানাতে হবে। এ সময় চক্রটি আস্থা অর্জনের জন্য কার্ডধারীদের নাম ও লেনদেনের কিছু সঠিক তথ্যও দিত। এভাবে ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের পিন নম্বর জেনে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল চক্রটি।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের পক্ষ থেকে প্রতারক চক্রের ১৩টি মুঠোফোন নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রাজধানীর বনানী থানায় গত ২১ মার্চ মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার কাগজপত্র এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা প্রতারণার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী দুটি প্রতিষ্ঠানে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টে অর্থ সরিয়ে নিত।
মামলার বাদী ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের লিটিগেশন ডিপার্টমেন্টের সহকারী কর্মকর্তা রজত রায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ১০ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের ৯০ জন গ্রাহকের ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এরপর আর কোনো গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান সতর্ক রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) রহমত উল্লাহ মানিক বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের চারজন ধরা পড়েছেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই জালিয়াতিতে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার মাহফুজ (২৭), পিরোজপুরের মশিউর রহমান (৩১), বরিশালের কাওসার হাওলাদার (৩০) এবং ফরিদপুরের সাইফুল ইসলাম (২৭)। এই চারজন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের মুঠোফোন জব্দ করেছে ডিবি।
ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গত ১৯ মার্চ লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের গ্রাহক আহসানুল হকের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রের সদস্যরা। তিনি একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক।
আহসানুল হক বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। ফোনটি ধরার পর প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের লংকাবাংলার কর্মকর্তা পরিচয় দেন। পরে কৌশলে তাঁর কার্ড ও গোপন পিন নম্বর জেনে নেন। এরপর তাঁর কার্ড থেকে একে একে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন।
একইভাবে লংকাবাংলার অন্য গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা গত বছরের ১০ আগস্ট লংকাবাংলার একজন গ্রাহকের ৬০ হাজার ১৮০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ২৫ আগস্ট আরেকজন গ্রাহকের ৮৩ হাজার ৬৪০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এর দুই দিন পর ২৭ আগস্ট একজন গ্রাহকের ৮৬ হাজার ৭০২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। এভাবে বিভিন্ন সময় ৯০ জন গ্রাহকের ৫৫ লাখ টাকা চক্রটি সরিয়ে নিয়েছে।