কার্টুনিস্ট কিশোরের মামলা গ্রহণ, পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে করা কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল।
তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আহমেদ কবির কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একজন পুলিশ সুপার (এসপি) সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
তাপস কুমার পাল জানান, একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিশোরের শারীরিক জখমের ঘটনাটি কবেকার, এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানোর আগে ‘অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন’ চালানোর অভিযোগে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গত বুধবার মামলার আবেদন করেন কার্টুনিস্ট কিশোর। এদিন তিনি নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ‘স্যার, আমি বিচার চাই।’ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ কার্টুনিস্ট কিশোরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আজ আদালত আদেশ দিলেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৫ মে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু তাঁকে ২ মে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় ১৬-১৭ জন সাদাপোশাকধারী ব্যক্তি। তারা কিশোরকে হাতকড়া ও মুখোশ পরিয়ে অচেনা নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে একটি কক্ষে ৪ মে পর্যন্ত তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই সময়ে তাঁর আঁকা বিভিন্ন কার্টুন দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর কানে প্রচণ্ড জোরে থাপ্পড় মারে একজন। তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যান। কিছুক্ষণের জন্য তিনি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়েন। কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। পরে আবার তাঁকে মারতে শুরু করে। ৫ মে তিনি নিজেকে র্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান। সেখানে লেখক মুশতাক আহমেদকে দেখতে পান কিশোর।
কিশোর আদালতকে জানান, তিনি এখনো অসুস্থ। তাঁর কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, হঠাৎ করে পড়ে যান। তিনি যখন এই বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন সাক্ষীর কাঠগড়ায় তাঁকে একজন আইনজীবী ধরে রেখে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেন।
রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে র্যাবের করা মামলায় কিশোরের সঙ্গে মুশতাককেও আসামি করা হয়। এই মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়। মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। প্রায় ১০ মাস কারাভোগের পর ৩ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের জামিন পান কিশোর। ৪ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
কার্টুনিস্ট কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হয়।