কাতারে আরব কাপে আলো ছড়ালেন বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকেরা

বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকেরা
ছবি: সংগৃহীত

কাতারে সম্প্রতি শেষ হলো ফিফা আরব কাপের প্রথম আসর। ১৬টি দেশের অংশগ্রহণ ছিল প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ফিফা আরব কাপের এই আয়োজনে। আর এর মধ্য দিয়ে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ২০২২ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের বহুমুখী মহড়া অনুষ্ঠিত হলো কাতারে।

কারণ, ফিফা আরব কাপের সব কটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপ উপলক্ষে নির্মিত স্টেডিয়ামগুলোতে। ২০২২ সালের জন্য নির্ধারিত আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে ছয়টিতে আয়োজন করা হয় ফিফা আরব কাপের আসর। শুধু তা–ই নয়, বিশ্বকাপ চলাকালে দর্শকদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক ও সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, সেসব খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছে কাতার বাস, মেট্রোরেল, পুলিশ, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীসহ অন্য সংস্থাগুলো।

ফিফা আরব কাপ কেন্দ্র করে আগত বিভিন্ন দেশের দর্শক ও সমর্থকদের পদভারে নানা রকম বৈচিত্র্যময় ও আনন্দদায়ক প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর ছিল রাজধানী দোহাসহ অন্য শহরগুলো। ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এই আসর চলে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেমিফাইনালে আলজেরিয়ার কাছে স্বাগতিক দেশ কাতারের হার হলেও দর্শকের কমতি ছিল না ফাইনালে। ৬০ হাজার ৪৫৬ জন দর্শকের উপস্থিতিতে ফাইনাল ম্যাচে তিউনিসিয়াকে হারানো শিরোপাজয়ী আলজেরিয়ানদের হাতে কাপ তুলে দেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলথানি ও ফিফার প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো।

কাতারে ফিফা আরব কাপের পুরো আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে সামাল দিতে প্রায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয় ফিফা। এ স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি তরুণেরাও। তাঁদের অধিকাংশ কাতার প্রবাসী হলেও বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন কয়েকজন। আর তাই এমন কোনো ভেন্যু ছিল না, যেখানে ভেতরে ও বাইরে দেখা মেলেনি বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে গ্যালারি তো বটেই, মিডিয়া ও ভিআইপি কর্নারগুলোতেও ছিল বাংলাদেশি তরুণদের উপস্থিতি।

কাতারে ফিফা আরব কাপের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয় গত এপ্রিলে। ব্যবস্থাপনা সংস্থা সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসির কাছে কাতার ও কাতারের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হতে আবেদন করেন ৫৫ হাজার ৯৮৯ জন। নানা ধাপে বাছাইপর্ব শেষে মনোনীত হন ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের মধ্যে কাতারের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া হয় ৩৫০ জনকে।

ফিফার অধীনে আরব কাপের এ আয়োজনে বিভিন্ন ধাপের বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দিত কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণেরা। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রথম আলো বন্ধুসভা কাতার শাখার সদস্য।

বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকেরা
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে ফিফার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বন্ধুসভা কাতার শাখার সাধারণ সম্পাদক আবজল আহমদ বলেন, ‘এমন একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া উৎসবে ফিফার তত্ত্বাবধানে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। এ আয়োজনের প্রতিটি ধাপে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে নানাভাবে কাজে আসবে। প্রথম আলো বন্ধুসভা কাতার শাখার আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু এ আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে বোরহানউদ্দীন, মো. নাহিদ ইসলামসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। বন্ধুসভার সদস্য হিসেবে আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গৌরব বোধ করছি।’

বন্ধুসভার বাইরে আরও অনেক প্রবাসী তরুণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ফিফা আরব কাপের নানা আয়োজনে। প্রবাসী পেশাজীবী মো. আবদুল বারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাতারে বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা অনেক হলেও সেই তুলনায় ফিফা স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে আমাদের উপস্থিতি কম বলা চলে।’

কাতারে ফিফা আরব কাপ উপলক্ষে এই স্বেচ্ছাসেবকদের ভাগ করা হয় বিভিন্ন দলে। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা থেকে শুরু করে টিকিট বিক্রি, ফ্যান আইডি বিতরণ, স্টেডিয়ামে নানা রকম দায়িত্ব পালনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। আর তাই স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানে ১৯ ডিসেম্বর রাতে দোহার সর্বাধুনিক ও সর্ববৃহৎ থিমপার্কে এক জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় ফিফার পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকেরা
ছবি: সংগৃহীত

কাতারে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অনেক প্রবাসী তরুণ ফিফা আরব কাপের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন এসেছেন। সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে একটি ক্রীড়াপ্রেমী দেশ, তা ফুটে উঠেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আশা করছি, আগামী ফিফা বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের তরুণেরা ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন এবং এ জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে করণীয় সবকিছু আমরা করতে প্রস্তুত।’

ফিফা আরব কাপের বিভিন্ন ম্যাচ দেখতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত হন স্টেডিয়ামগুলোতে। বিশেষ করে কাতারের খেলাগুলো এবং সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচগুলো দেখার জন্য দূরের এলাকাগুলো থেকে দল বেঁধে স্টেডিয়ামে এসেছেন প্রবাসী তরুণেরা।

সেমিফাইনালে কাতার বনাম আলজেরিয়ার ম্যাচ দেখতে আলথুমামা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন প্রবাসী ব্যবসায়ী শরিফুল হক। খেলার আগে ও পরে এবং খেলা চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশি তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের দেখে আনন্দিত শরিফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চাই, আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা বাড়াতে সরকারিভাবে কাতার ও ফিফা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হোক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম ও সুখ্যাতি যেমন সমুন্নত হবে, তেমনিভাবে আমাদের তরুণেরা অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবেন।’