মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে এর আগেই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে সুরক্ষা বাঁধ (গাইড ওয়াল) দেবে মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে মূল সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক নির্মাণকাজে সঠিক মানের অভাব, সড়কটির নকশা ও যথাযথ পরিকল্পনার অভাব, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দাবি, বন্যার পানির স্রোতে সড়কের পাশে সুরক্ষা বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্থানীয় সাংসদ মমতাজ বেগমের প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ১ জুলাই সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করা হয়। এর আগে সড়কটির দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় চার হাজার গাছ কাটা হয়। সরকারের ২৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫টি গুচ্ছে (প্যাকেজ) সড়কটির প্রশস্তের কাজ শুরু হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময় নির্ধারণ থাকলেও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কাজের গতি কমে আসে। ফলে পরবর্তীতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণকাজের সময় বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে সড়কটির হেমায়েতপুর থেকে বেউথা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় কাজ শেষ হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কটির দক্ষিণ পাশে সরু খালে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সিঙ্গাইরের বাইমাইল থেকে ভূমদক্ষিণ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সড়কের সুরক্ষা দেবে গেছে। এতে মূল সড়ক ও সুরক্ষা বাঁধের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ফাটলের মধ্যে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে আটকাতে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। এ ছাড়া সিঙ্গাইর বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে সুরক্ষা বাঁধ রক্ষায় বালুবোঝাই জিও ব্যাগ ফেলার জন্য কাজ চলছে। সড়কের উত্তর পাশের কয়েকটি স্থানে মাটি সরে গিয়ে মূল সড়ক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, কাজের শুরুতেই অভিযোগ ছিল, মানিকগঞ্জ অংশে সড়কটির কোনো কোনো জায়গায় সঠিক মানের কাজ হচ্ছে না। অনিয়মের মধ্য দিয়েই কাজ শুরু হয়। সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় মাটি সঠিকভাবে মেকাডাম ও ব্লকগুলো যথাযথ বসানো হয়নি। এ কারণে বন্যার সামান্য পানিতেই সুরক্ষা বাঁধ দেবে গিয়ে মহাসড়কটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য কোহিনুর ইসলাম বলেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং সংশ্লিষ্ট সওজ বিভাগের সঠিক নজরদারির অভাব রয়েছে। সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটি ঝুঁকি মধ্যে পড়েছে।
এ দিকে গত শনিবার মহাসড়কটির এই পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সাংসদ মমতাজ বেগম এবং জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউসুল হাসান মারুফ। এ সময় সাংসদ মমতাজ বেগম সড়কটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী গাউসুল হাসান মারুফ বলেন, খালে বন্যার পানির স্রোতের কারণে সুরক্ষা বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে কয়েকটি অংশে বাঁধ দেবে গেছে। এতে কয়েকটি স্থানে মূল সড়ক ও সুরক্ষা বাঁধের মধ্যে ফাঁকার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব ফাঁকা স্থানে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে, যেন বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে আর দেবে না যায়। তিনি বলেন, নির্মাণকাজের ত্রুটি বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর ও সওজের কোনো অনিয়ম বা গাফিলতি ছিল না। কাজ শেষ হওয়ার পরও তিন বছর পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মহাসড়কটি মেরামত ও সংস্কার করার শর্ত ও নির্দেশনা রয়েছে। বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে সুরক্ষা বাঁধটি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।