কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা

১৬ এপ্রিল ২০১৭, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

*  কারও নির্দেশে, কারও চাপে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এমন ভাবলে এটা টেকসই হবে না। নিজস্ব উদ্যেগে কাজটি করতে হবে

* কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঠিক না থাকলে সাধারণ শ্রমিক ও সেফটি কমিটিকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে

*  কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও িনরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার ক্ষেত্রে

*  কলকবজা, ভূমি, আসবাব ইত্যাদি উপকরণের মতো পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ব্যয়কেও প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশে পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এখনো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের স্বাস্থ্য ভালো ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ থাকলে তাঁদের উৎপাদনক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এতে মালিকেরা উপকৃত হবেন। এ জন্য এই অর্থ ব্যয়কে খরচ হিসেবে না দেখে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা প্রয়োজন। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন সূচনা বক্তব্য দেবেন মাননীয় মন্ত্রী মুজিবুল হক।

মো. মুজিবুল হক
মো. মুজিবুল হক

মো. মুজিবুল হক: আগামী ২৮ এপ্রিল কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস পালিত হবে। শিল্পমালিকেরা এ বিষয়ে কিছু জানলেও শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ প্রায় কিছু জানেই না। শ্রম আইন সম্পর্কেও অনেকে জানে না।
আমরা কৃষিভিত্তিক দেশ ছিলাম। আমাদের শিল্পের ইতিহাস ৪০ থেকে ৪৫ বছরের বেশি না। বিশেষ করে রানা প্লাজা ধসের পর অনেক কিছু জানছি। এক অর্থে মালিক-শ্রমিক-রাজনীতিবিদসহ আমরা সবাই প্রায় ঘুম থেকে জেগে উঠি। আমাদের শ্রম আইন সংশোধন হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করার ক্ষেত্রে। তাহলে আইন প্রয়োগ সহজ হবে। রানা প্লাজা ধসের পর কারাখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডে অনেক গতিশীলতা এসেছে।
লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে তিন গুণ। কিন্তু বাংলাদেশে ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আছে। যতই লোকবল বাড়ানো হোক, সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে বহু বছর লেগে যাবে। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা শিল্পসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে, নোটিশ দিয়ে, মুখে বলে বিভিন্নভাবে নিয়মকানুন মেলে চলার কথা বলি। অনেকেই শোনে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে তাদের মানসিকতা তৈরি হয়নি।

এ জন্য গণমাধ্যম, মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে গুরুত্বসহকারে সচেতনতার কাজ করতে হবে। আজকের আলোচনায় যে পরামর্শ আসবে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

স্টিভ নিডহ্যাম
স্টিভ নিডহ্যাম

স্টিভ নিডহ্যাম: গত চার বছরে, বিশেষ করে পোশাকশিল্পের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে কাজ হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যনিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। এ কথা সত্যি যে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ নিরাপত্তার ইস্যুতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন, মালিক, শ্রমিক আরও সংশ্লিষ্ট সবাই অনেক সচেতন হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি। সবার প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে আরও অনেক বেশি অগ্রগতি হবে বলে আশা করি।

মোহাম্মদ নাসির
মোহাম্মদ নাসির

মোহাম্মদ নাসির: সবাই জানি, পোশাক খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এ শিল্পে ৪৪ লাখ শ্রমিক আছেন। এর ৭০ শতাংশ নারী। শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি।

২০১৭ সালের মধ্যেই অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের অধিকাংশ কাজ শেষ হবে। আমাদের বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের ফলে ছোট শিল্পগুলো অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের শর্তগুলো ধীরে ধীরে পূরণ করতে পারবে। পোশাক খাতসহ শিল্পকেই কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। প্রথম পর্যায়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর ১১৪ জন সিনিয়র মাস্টার ট্রেনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এসব সিনিয়র মাস্টার ট্রেনার ৫৮৫টি কারখানার ৮ হাজার ৩৮ জন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কারখানার সুপারভাইজারদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ে বিজিএমইএ কর্মক্ষেত্রে মোট ৮ লাখ শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি সেফটি কমিটি গঠনের জন্যও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আগুন নেভানো, কারখানা থেকে নিরাপদে বের হওয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

বিজিএমইএ নিজস্ব উদ্যোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছে। এখানে গড়ে প্রতি মাসে ১১ হাজার শ্রমিক বিনা খরচে চিকিৎসা নিতে পারেন। ভবিষ্যতে আমাদের শ্রমিকদের কর্মেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও িনরাপত্তা আরও বেশি নিশ্চিত হবে।

ওয়াজেদুল ইসলাম খান
ওয়াজেদুল ইসলাম খান

ওয়াজেদুল ইসলাম খান: কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শ্রম আইন আছে। কিন্তু এর কার্যকারিতা নেই। দেশে যদি ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে কারখানা পরিদর্শকের পক্ষে কোনোভাবেই পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে শ্রম আইন ও অন্যান্য বিষয়ে মালিকদেরই সচেতন হতে হবে। আমাদের অনেক কারখানা এখন নিয়মনীতির মধ্যে এসেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন বায়াররা। এটা দুঃখজনক যে মালিকদের থেকে উদ্যোগটা আসেনি। ট্যানারি যখন ঢাকার হাজারীবাগে ছিল, তখনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন যে সাভারে নেওয়া হয়েছে, সেখানেও কারখানার মালিক, সরকার ও কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর কেউ তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পানির ব্যবস্থা নেই। বিরান ভূমিতে এসব কারখানা। শ্রমিকেরা কোথায় থাকবেন, কী করবেন? অনেক শ্রমিক ২০ থেকে ৩০ বছর কাজ করছেন। তাঁদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। চাকরি স্থায়ী নয়। নতুন জায়গায় মালিক বলবেন, এখানে নতুন করে চাকরি করতে হবে।

 আবার জাহাজভাঙা, নির্মাণশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা জীবন-মরণ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রতিবাদ করতে হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও কর্মপরিবেশ ঠিক না হলে শ্রমিকদের জোর প্রতিবাদ করতে হবে। সবাই এগিয়ে না এলে হবে না।

মোহাম্মদ হাতেম
মোহাম্মদ হাতেম

মোহাম্মদ হাতেম: বিশ্বে এখন শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা আমাদের পোশাকশিল্পে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেল। তবে পেশাগত স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক উভয়ের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

আমরা বিদেশে দেখেছি, পেশাগত অসুস্থতার জন্য ইনস্যুরেন্স পলিসি আছে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ মালিক-শ্রমিক জানেন না, কী ধরনের পেশাগত অসুস্থতা হতে পারে। এসব নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে। ছোট পোশাকশিল্পগুলো অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সব শর্ত পূরণ করতে পারছে না। তাদের মূলধন কম। ব্যবসা কম। সমস্যা বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এ কারখানাগুলো পরিদর্শন করছে। সংস্কার পরিকল্পনার জন্য জাইকা, আইএফসি ও অন্যান্য সংস্থার তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে। কিন্তু এই তহবিল গ্রহণের প্রক্রিয়া এত জটিল যে কয়েকটি কারখানা ছাড়া অধিকাংশ কারখানা এ তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যদি এই তহবিল সহজলভ্য করা হয়, তাহলে এসব শিল্প সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। আইএলও যে পরিদর্শন করেছে, এর ফলাফলও আমাদের জানা প্রয়োজন।

রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের মালিকেরা বুঝেছেন, যেনতেনভাবে কারখানা চালানো যাবে না। গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিরাপত্তা ইস্যুতে বিনিয়োগ করেছি। বায়ারদের এ ক্ষেত্রে সহায়তা করার কথা ছিল। তাঁরা তো সেটা করেননি, বরং প্রতিটি ব্র্যান্ড গত তিন থেকে চার বছরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দাম কমিয়েছে।

নাজমা আক্তার
নাজমা আক্তার

নাজমা আক্তার: বসে কাজ করতে করতে মেয়েদের ঘাড়ব্যথা হয়। কোমরব্যথাসহ আরও অনেক সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন থাকে না। সব জায়গায় সেফটি কমিটি নেই। আবার সেফটি কমিটি থাকলেও সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। একজন শ্রমিক মারা গেলে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। এটা অত্যন্ত কম। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

২০০০ সালে মহাখালীতে একটা পোশাক কারখানায় শ্রমিকেরা ধোঁয়ায় মারা গেছেন। এ বিষয়ে আরও সচেতনতা প্রয়োজন। বায়াররা কম দামে পোশাক কেনেন। মালিকের মুনাফা কম হয়। এসব কিছুর চাপ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নারী শ্রমিককেই বহন করতে হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে কম বেতন পান আমাদের নারী শ্রমিকেরা। এ অবস্থায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দূরে চলে যায়। বায়ারদের সঙ্গে দরাদরিতে পোশাকের দাম ঠিক রাখার জন্য মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

যদি শুধু বায়ারদের চাপে পোশাকশিল্পের উন্নয়ন হয়, তাহলে এটা টেকসই হবে না। শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে, নিরাপত্তা থাকলে দিনের শেষে মালিকেরই লাভ। তাই শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে মালিকদের আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।

লুইস ভেনগাস
লুইস ভেনগাস

লুইস ভেনগাস: পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু এই কাজ ধারাবাহিকভাবে করার জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, সেটা অধিকাংশ মালিকের থাকে না।

এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এ জন্য অনেক সুবিধাও পাওয়া যায়। খুব সহজেই বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা যায়।

শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক বেশি উৎপাদনশীল হতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের অনেক ঝুঁকি কমে যায়। সুনাম বৃদ্ধি পায়।

কারও নির্দেশে, কারও চাপে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এমন ভাবলে এটা টেকসই হবে না। নিজস্ব উদ্যোগে কাজটি করতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতে আরও বেশি উন্নতি করতে হলে, আরও বেশি উৎপাদনশীল হতে হলে এ কাজ করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশিদের কাছে একটা ভালো বার্তা যাবে যে বাংলাদেশর শিল্প বিশ্বের মধ্যে অনেক ভালো।

তাদের শ্রমিকের স্বাস্থ্য ভালো, কারখানার পরিবেশ ভালো। তারা হলো উন্নত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রোল মডেল।

কুতুবউদ্দিন আহমেদ
কুতুবউদ্দিন আহমেদ

কুতুবউদ্দিন আহমেদ: পোশাকশিল্পসহ সব শিল্পকে টেকসই করতে হলে আমাদের একটা নিজস্ব ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, কারখানার সংস্কারসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ চলতে থাকে।

মধ্যস্তরে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় বড় ধরনের অনিয়ম হয়। মালিককে সবকিছু জানানো হয় না। আমাদের সিস্টেম কাজ করে না। লোকজন পেশাদার নন। তবে মালিক ও শ্রমিক সবাইকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আশির দশকে অত্যন্ত অপেশাদারভাবে আমরা ব্যবসা শুরু করেছি। আজ একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে। মালিকেরা ইচ্ছে করলে অনেক কিছু করতে পারেন।

কলকবজা, ভূমি, আসবাব ইত্যাদি উপকরণের মতো পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ব্যয়কেও প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইলেকট্রিকের তার ঠিক আছে কি না, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কেউ চেক করে না। আগুন এই পুরোনো তার থেকেই লাগে।

মালিক ও শ্রমিক কেউ ট্রেড ইউনিয়ন বোঝেন না। ফলে ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। কারখানার নিরাপত্তার জন্য একটা মানদণ্ড থাকতে হবে। তা না হলে পরিদর্শকদের অনৈতিক উপায়ে বিদায় করে দেবে। মোটের ওপর আমাদের শিল্পকারখানা এখন ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। আমাদের দেশে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রমিককে অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। এখানে সাধারণত কম দামের পণ্য উৎপাদন করা হয়। তাই মালিককে অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করে টিকে থাকতে হয়।

আমরা আরও বেশি দামের পণ্য উৎপাদন করব। গ্রহণযোগ্য মূল্য পাব, এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমাদের রপ্তানিমুখী ও দেশীয় বাজারের শিল্প রয়েছে। যেসব শিল্প বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে ও যারা দেশীয় বাজারের জন্য উৎপাদন করে, এ দুই ধরনের শিল্পের কর্মপরিবেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
সে জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কাজ গুরুত্বের ভিত্তিতে শুরু করতে হবে। যেমন, যেসব ক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি খুবই কম বা নেই, সেখান থেকে শুরু করা যেতে পারে। আবার যাদের সক্ষমতা বেশি, সেখান থেকেও শুরু করা যেতে পারে।

মন্ত্রী বলেছেন, দেশে ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য একটি মান নির্ধারণ করে, তাহলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে সারা দেশে কাজটি দ্রুত করা সম্ভব হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য সরকারের বেশি পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।

সেলিমা আহমদ
সেলিমা আহমদ

সেলিমা আহমদ: বিজিএমইএ এমনভাবে সামনে চলে আসে যেন মনে হয়, দেশে শিল্প বলতে বিজিএমইএকে বোঝায়। অথচ দেশে ব্যাপক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তাদের অবদানকে অনেক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দেখা হয় না। তাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে আসছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও অনিয়ম করে।

সরকার যদি শুরু থেকেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করত, তাহলেও একটি পরিবর্তন হয়তো আসত। ঘুষ-দুর্নীতি হচ্ছে আরেকটা বড় বাধা। অনেকে পরিদর্শন করতে আসেন। খারাপ কাজ করলে বাধা দেন। কিন্তু আবার যখন তাঁদের কিছু ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা চলে যান। অনিয়ম চলতেই থাকে।
প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি যেমন চেয়ারম্যান, মেম্বার থাকেন। তাঁরা কাদের জন্য রাজনীতি করেন? যদি মানুষের জন্য করেন, তাহলে অবশ্যই এগুলো দেখা উচিত। দেশে নারীদের মৃত্যুর একটা বড় কারণ হলো সার্ভিক্যাল ক্যানসার। অথচ শিক্ষিত-অশিক্ষিত অধিকাংশ নারী এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমি এটা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলি। অন্যদেরও বলা উচিত।

আমাদের ছয় হাজার কর্মকর্তা আছেন। তাঁদের জন্য মনোবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ রেখেছি। আরও বিভিন্নভাবে তাঁদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ ধরনের কাজের ফলে আমাদের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে শ্রমিক-মালিক উভয়েই লাভবান হন।

ফজলুল হক
ফজলুল হক

ফজলুল হক: বিশ্বের একমাত্র প্লাটিনাম সার্টিফায়েড নিটওয়্যার ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। এই কারখানাটি এনভয় গ্রুপের। আমার সনদপ্রাপ্ত করাখানা আছে। অনেকে জানতে চান, এত ভালো কারখানা করে লাভ কেমন হচ্ছে? কেউ শুধু লাভের কথা চিন্তা করলে তাঁর সনদ অর্জনের মতো কারখানা করা উচিত নয়। যিনি শ্রমিকদের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করবেন, কেবল তিনিই এ ধরনের কারখানা করবেন।
আমাকে প্রায় সবাই বলেন, বায়াররা বেশি দাম দেন কি না। টেবিলে বসে বায়াররা কয়েক মিনিট কারখানার ভীষণ প্রশংসা করেন। তারপর বলবেন, বাজার খুব প্রতিযোগিতামূলক। দাম বাড়াতে পারব না।

আমি একসময় বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ছিলাম। বায়ারদের ‘না’ বলার জন্য তখন স্লোগান শুরু করেছিলাম। কম–বেশি অনেকেই তখন বায়ারদের ‘না’ বলতেন। একজন মালিক কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সংস্কারকাজ করলেন। বায়ার যদি তাঁকে মাত্র দুই সেন্ট করেও দাম বাড়ান, তাহলেও তিনি একধরনের তৃপ্তি পাবেন। অন্তত ভাবতে পারবেন, সামান্য হলেও বায়ার তাঁর জন্য কিছু করেছেন।

এখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের গড় মান পৃথিবীর যেকোনো দেশের থেকে ভালো। আমাদের এখন প্রতিযোগিতা করতে হয় বইয়ে লেখা মানের সঙ্গে। একবার ইংল্যান্ডের এক সাংবাদিককে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা বইয়ের মান বাদ দিয়ে যেকোনো দেশের পোশাকশিল্পের মানের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বললেন, ইংল্যান্ডেও এমন শিল্প আছে, যেখানে তোমার ঢুকতে রুচি হবে না।

পৃথিবীর সেরা তিনটি কারখানা বাংলাদেশে। সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি বাংলাদেশে। আমরা ভালো করছি। তবে আরও অনেক ক্ষেত্রে ভালো করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশের শিল্পকারখানা আরও ভালো করবে।

আলবার্টো সারডা
আলবার্টো সারডা

আলবার্টো সারডা: বিভিন্ন দেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় কাজ করছি। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ছোট-মাঝারি শিল্পসহ সব ধরনের শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কারখানা পরিদর্শন করে বেশ আশাবাদী হতে পেরেছি। কারণ, কারখানাগুলোতে সেফটি কমিটি আছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কারখানা পরিদর্শন করছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য মালিকেরা সচেতন হচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করছেন।
প্রতিবছর বিশ্বে কয়েক কোটি মানুষ পেশাগত অসুস্থতা ও নিরাপত্তাহীনতাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। এটা শুধু শ্রমিকেরই ক্ষতি নয়, এটা শিল্পমালিকেরও ক্ষতি। এটা দেশের উন্নয়নের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এই মানুষগুলো বোঝা হয়ে দাঁড়ান। কর্মক্ষেত্রে যাঁরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন, মালিক, বিমা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবা সংস্থা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারে।

প্রত্যেক শিল্পমালিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধিসহ তা বিভিন্নভাবে মালিককে সহায়তা করে।

এ ক্ষেত্রে ব্যয়কে খরচ হিসেবে বিবেচনা না করে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। কারণ, এ বিনিয়োগের ফলে কোম্পানির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কোম্পানি টেকসই হবে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, শ্রমিকনেতা, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চেষ্টা করলে কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।

মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া
মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া

মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া: পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যয় কোনো খরচ নয়, এটা একটা বিনিয়োগ। বড় শিল্পমালিকেরা এটা বুঝেছেন। কিন্তু ছোট ও মাঝারি শিল্পমালিকেরা এখনো বোঝেননি। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

কিন্তু আমাদের এত লোকবল নেই যে সবাইকে বিষয়টি বোঝাতে পারব। ইলেকট্রিক্যাল, ফায়ার ও স্ট্রাকচারাল—এই তিনভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। এর কোনো একটিতে ত্রুটি থাকলে কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হবে না।

কোনো কারখানায় কাজ করলে কিছু পেশাগত রোগ হয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এ রোগ সাধারণত বোঝা যায় না। ৫ থেকে ১০ বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও পরে ধরা পড়ে। এ জন্য আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলি, কারখানায় কাজ করার সময় প্রত্যেক শ্রমিক যেন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। তা না হলে তাঁরা পেশাগত অসুস্থতায় ভুগবেন।
একজন শ্রমিক পেশাগত বা দুর্ঘটনা, যেভাবেই অসুস্থ হন না কেন, এর ব্যয়ভার মালিককেই বহন করতে হবে। এটা মালিক ও শ্রমিক উভয়ের ক্ষতি। তবে মালিকের থেকে শ্রমিকের ক্ষতি অনেক বেশি।

আমরা পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। গত বছর পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস পালন করেছিলাম, এ বছর আরও বড় করে এটা পালন করা হবে। ভবিষ্যতে যেন প্রতিটি কারাখানা এ দিবস পালন করে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা অনেক বেশি নিশ্চিত হবে।

মো. মুজিবুল হক: আমাদের শিল্পের ইতিহাস খুব বেশি দীর্ঘ নয়। আজ যাঁরা বড় শিল্পের মালিক, তিন-চার দশক আগেও তাঁদের খুব বেশি কিছু ছিল না। প্রায় সবকিছুই আমাদের কাছে নতুন। বিশেষ করে পোশাকশিল্প খুবই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে।

আজ আলোচনা করছি পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে। মাত্র কয়েক বছর আগেও বিষয়টি আমাদের কাছে ছিল অপরিচিত। জার্মানিতে এক অনুষ্ঠানে বায়ারদের বলেছি, তোমরা সস্তায় পেলেই পণ্য কেনো। কারখানার কমপ্লায়েন্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন করো না। দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ দাও আমাদের।

কমপ্লায়েন্সের জন্য বিশাল খরচ। কিন্তু তোমরা পণ্যের দাম না বাড়িয়ে বরং কমাচ্ছ। কমপ্লায়েন্সের কথা বললে তোমাদের খরচ শেয়ার করতে হবে। আমরা তো আমাদের মতো কাজ করছি। আমাদের পোশাকশিল্পের মালিকদের একটা একতা দরকার। তাহলে বায়াররা পোশাকের দাম কমানোর সুযোগ পাবে না।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু পোশাকশিল্পের জন্যই জরুরি নয়। দেশের সব শিল্পের জন্যই এটা প্রয়োজন। সবাইকে আগে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রত্যেককে প্রত্যেকের দায়িত্ব থেকে কাজটি করতে হবে। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, কোনো কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক থাকলে একজন ডাক্তার থাকবেন। একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রমিক থাকলে একটা ক্লিনিক থাকবে, ২০ জনের বেশি নারী শ্রমিক থাকলে পরিচর্যার জায়গা থাকবে ইত্যাদি।

অনেকে এ আইন মানেন না। ১০০টি মামলা করেছি। সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০ হাজার টাকা। অনেকের কাছে এ টাকা সামান্য। জরিমানার টাকা দিয়ে চলে আসেন। মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে না। মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টে বিশেষ কিছু মানুষ থাকেন, তাঁরা শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন।

সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সবাইকে সচেতন করা। আমাদের লোকবল দিয়ে লাখ লাখ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে আইন মানানো সম্ভব নয়। তবে আগের থেকে অনেক উন্নতি হচ্ছে। সবার মধ্যে কিছু সচেতনতা আসছে। আজকের আলোচনায় যেসব সুপারিশ এসেছে, এগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

আব্দুল কাইয়ুম: শিল্পমালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। সবাইকে আইন মানতে হবে। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিজেরা সচেতন হলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন

মো. মুজিবুল হক           :   সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

কুতুবউদ্দিন আহমেদ       :   চেয়ারম্যান, এনভয় গ্রুপ

মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া    :   ইন্সপেক্টর জেনারেল, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর

মোহাম্মদ নাসির           :   সহসভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)

ফজলুল হক               :   সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)ও বিকেএমইএ

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম     :   রিসার্চ ডিরেক্টর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

সেলিমা আহমদ            :   সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

মোহাম্মদ হাতেম           :   প্রথম সহসভাপতি,এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও সাবেক প্রথম সহসভাপতি, বিকেএমইএ

ওয়াজেদুল ইসলাম খান     :   সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নকেন্দ্র

নাজমা আক্তার             :   সভাপতি, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন

লুইস ভেনগাস             :   প্রোগ্রাম ম্যানেজার, বেটারওয়ার্ক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা

আলবার্টো সারডা          :   সিনিয়র লেবার ইন্সপেক্টর অ্যান্ড ওএসএইচ অ্যাডভাইজর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা

স্টিভ নিডহ্যাম              :   সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম               :   সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো