করোনায় ডেসকো, ওয়াসা, তিতাসের বিশেষ ব্যবস্থা
বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কার্যত অচল সারা দেশ। বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। চলছে সরকার–ঘোষিত সাধারণ ছুটি। তবে বিদ্যুৎ–গ্যাস ও পানির মতো জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কর্মীদের ছুটি নেই। ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সংস্থাই কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জরুরি সেবা কীভাবে চলছে, তার খোঁজ করা হয়েছিল প্রথম আলোর পক্ষ থেকে। জানা গেছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রতিটি সংস্থাই বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের সব বিল মে মাস পর্যন্ত না দিতে আদেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ। বন্ধ রাখা হয়েছে তিতাস গ্যাসের মাসিক বিলও।
আরইবির ‘গেরিলা’ দল
আরইবির অধীনে সারা দেশে ৮০টি সমিতি আছে। প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর মিলিয়ে সারা দেশে কার্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৭০০টি। দেশের সব থেকে বড় এই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার গ্রাহক রয়েছেন ২ কোটি ৮৪ লাখ। রাতদিন প্রায় ৩ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং তাঁদের সমস্যার সমাধান করা অনেক কঠিন বিষয়। মহামারির এই সময় বিষয়টি রীতিমতো দুরূহ। আরইবি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে এবং গ্রাহকের বিদ্যুৎ–সংক্রান্ত সেবার জন্য সারা দেশের ১ হাজার ৭০০ কার্যালয়ে ছোট ছোট দল গঠন করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেরিলা দল’। প্রতিষ্ঠানটির শুধু মাঠপর্যায়ে লাইনম্যান কর্মী আছেন ২০ হাজার।
>বিদ্যুতের সব বিল মে মাস পর্যন্ত না দিলেও চলবে
তিতাস গ্যাসের মাসিক বিল পরিশোধও আপাতত বন্ধ
আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন জানান, যেসব গ্রামে বিদ্যুতের টেকনিশিয়ান রয়েছেন, তাঁদের অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। যে গ্রামে সমস্যা সে গ্রামের টেকনিশিয়ান সেটি সমাধান করে দিচ্ছেন। এতে বাইরে থেকে গ্রামে মানুষ প্রবেশ করার প্রয়োজন হচ্ছে না।
সতর্ক ডেসকোর কর্মীরা
রাজধানী ঢাকার উত্তর অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডেসকো। এ প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো আঞ্চলিক কার্যালয়ে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। টিমের প্রতিটি সদস্যকে দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা পোশাকসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী জানিয়েছেন, কর্মীদের বাসা থেকে আলাদা গাড়িতে করে আনা হচ্ছে। আবার গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ওই গাড়ি অন্য কেউ ব্যবহার করছেন না। গাড়িও জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। যাঁরা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন, তাঁদের এলাকায় ভেন্ডিং বাড়ানো হয়েছে।
সুরক্ষা পোশাক পাননি ডিপিডিসির কর্মীরা
রাজধানীর একাংশে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসিও জরুরি দল তৈরি করেছে সার্বক্ষণিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য। কর্মীদের পিপিই ছাড়া অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদা গাড়ির, যা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে দফায় দফায়। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্মীদের সুরক্ষা পোশাক না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, পিপিই শুধু চিকিৎসকদের ব্যবহার করা উচিত। এটা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের প্রয়োজন নেই।
সেবা দিচ্ছে তিতাসের জরুরি টিম
বিদ্যমান অচলাবস্থার মধ্যে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল-মামুনকে ফোকাল পয়েন্ট করে একটি জরুরি টিম তৈরি করা হয়েছে। এই টিমকে মাঠে পাঠানো হচ্ছে আলাদা গাড়িতে, সুরক্ষা পোশাক ও অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসহ। এ ছাড়া প্রয়োজন ছাড়া অন্য কর্মীদের বাইরে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে তিতাস।
ঢাকা ওয়াসাও নিয়েছে ব্যবস্থা
এদিকেকরোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের জন্য নানা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
সংস্থার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের টেলিফোনে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়।