পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়া উচিত নয়। এই অনুসন্ধান যথাযথ হওয়া উচিত। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
করোনার উৎস অনুসন্ধান নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের টানাপোড়েন চলছে অনেক দিন ধরেই। চীনের উহানের পরীক্ষাগার থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ে বলে সন্দেহের কথা বলে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। এই অনুসন্ধানে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষাগার পরিদর্শনের অনুমতি দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু নিয়মের মধ্যে পড়ে না জানিয়ে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বেইজিং। এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ওই কথা বললেন।
সিনহুয়া গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের সিনোফার্মের তৈরি করোনার টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য ১৬ আগস্ট সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই অনুষ্ঠানের ফাঁকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘করোনার উৎস ও কারণ উদ্ঘাটনের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যেকোনো তদন্তের ফল বিপর্যয় ডেকে আনে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে অভিযানের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি প্রথমত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তারপর বলা হয়, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এর পক্ষে ভুয়া তথ্য ও ছবি হাজির করা হয়। এগুলো দিয়ে পুরো বিশ্বকে বিভ্রান্ত করে বিশ্বাস করানো হয় যে ‘বিষয়টি সত্য’। তিনি বলেন, কিন্তু ইরাক দখলের পর তারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে তার ছিটেফোঁটা বের করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করল।
কোভিড মহামারি প্রতিরোধে এখন সব দেশের সম্মিলিতভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বজুড়ে দেশগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা বিতরণ করা। তা সে দেশ ধনী বা দরিদ্র, যা–ই হোক না কেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক যে অনেক ধনী দেশ বিপুল পরিমাণ টিকা মজুত করেছে। তারা সেগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে দিচ্ছে না। টিকা হওয়া উচিত জনগণের সম্পদ এবং তা কোনো বৈষম্যহীনভাবে সব দেশে বিতরণ করা উচিত।’
করোনা মহামারি প্রতিরোধের লড়াইয়ে সহযোগিতার জন্য চীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এ কে আব্দুল মোমেন। এই মহামারির সময়ে চীন–বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই তারা আমাদের প্রতি খুবই সহায়তার মনোভাব দেখিয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই মহামারির শুরুর দিকে চীন যখন নিজেরা বিপদে ছিল, তখন দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে বাংলাদেশ যখন সমস্যায় পড়েছে তখন চীন সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলো সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই সৌভাগ্যবান। আমাদের চীনের মতো ভালো একটি বন্ধু আছে।’