করোনাভাইরাস: আতঙ্ক নয়, হাঁচি-কাশির নিয়ম মানা জরুরি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে হাত ধোয়া ও হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে, আপনজন ও সমাজের অন্যদের নিরাপদ রাখার স্বার্থেই এটি করতে হবে। বিষয়গুলো কিন্তু নতুন করে বলা হচ্ছে না। এর আগে যখন সার্স ও সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনো এসব বলা হয়েছে। মানুষকে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে বাংলাদেশে এমন বার্তায় কাজ হয় না। ভয়ের সংস্কৃতি বা লাঠির বাড়িতে আমাদের দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখায়। করোনার ভয়ে দোকান থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উধাও হওয়া এর একটি উদাহরণ। ঢাকা শহরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উধাও হবে, সেটি আমরা চিন্তাও করিনি। কারণ, স্যানিটাইজারকে বিলাসিতার সামগ্রী হিসেবেই ভাবা হতো। বাজারে তরল বা অন্য সাবানেরও চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে কিছু ভেজাল জিনিসও বিক্রি হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সাবান-পানিই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কারণ, এই ভাইরাসের আবরণ চর্বিযুক্ত, সাবান-পানিতে এটি খুব দ্রুত গলে যায়। এ ছাড়া ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সাবান-পানিতেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। যেকোনো ব্র্যান্ডের সাবান (কাপড় ধোয়া বা গোসলের)–পানিই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর।
তবে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়া মানতে হবে। ৮-১০ বছর আগে আইসিডিডিআরবি একটি সমীক্ষা করেছিল। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ঘরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে এটি করা হয়েছিল। সমীক্ষার ফলাফল বলছে, আমরা যা বলি আর যা করি, তার মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে। জিজ্ঞেস করলে মানুষ বলে খাওয়ার আগে হাত ধুই, প্রক্রিয়া মেনে হাত ধুই—কিন্তু বাস্তবে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ প্রক্রিয়া মেনে হাত ধোয় না। করোনা প্রতিরোধের জন্য ২০ সেকেন্ড হাত সাবান দিয়ে ঘষতে হবে। আঙুলের ফাঁক, নখ ও এক হাত দিয়ে আরেক হাত কচলিয়ে হাত ধুতে হবে।
এর বাইরে আরেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়া কিংবা কিছুই না থাকলে কনুই ভাঁজ করে হাতের আস্তিন দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। এটি খুবই সাধারণ শিষ্টাচারের বিষয়। আপনি যখন একজনের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন আপনার কথার সঙ্গে থুতু ছিটে যাচ্ছে কি-না, হাঁচি-কাশির ছিটা অন্যের শরীরে বা কাপড়ে লাগছে কি না, তা লক্ষ রাখতে হবে। অবশ্য এই শিষ্টাচারের শিক্ষা মানুষ পরিবার থেকেই পায়। যেখানে সেখানে থুতু না ফেলাও এই শিষ্টাচারের অংশ।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমও হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার শেখাতে পারে, বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেল। কিছু চ্যানেল ভিডিওর মাধ্যমে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার জানাচ্ছে—এটি ইতিবাচক। গণমাধ্যমের এই প্রচারণায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) আধেয় তৈরি করে সহযোগিতা করতে পারে। আর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যাখ্যাও দিতে হবে। না হলে মানুষ এর গুরুত্ব বোঝে না। প্রচারের মাধ্যমে বলতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যে ড্রপলেট (তরল কণা) যায়, সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। তাই আপনি যদি মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দেন, যেখানে সেখানে থুতু ফেলেন, তবে এই রোগ অন্যের মধ্যে ছড়াতে পারে।
সাধারণত এসব বিষয় মানুষকে শেখাতে অনেক দিন সময় লাগে। কিন্তু এখন করোনা–ঝুঁকির কারণে মানুষ হয়তো দ্রুত বিষয়টি আয়ত্ত করবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সেটি মেনে চলবে কি-না, সেটি সময়ই বলে দেবে।
খায়রুল ইসলাম: আঞ্চলিক পরিচালক, দক্ষিণ এশিয়া, ওয়াটারএইড
আরও পড়ুন: