করোনা সংক্রমিতদের পাশে সদা জাগ্রত সাংসদ সিমিন হোসেন
গত ১৯ এপ্রিল সকাল থেকেই হঠাৎ গলাব্যথা শুরু হয় লুৎফুন্নাহার খানমের (৪৫)। সাধারণ ব্যথা বা গলায় টনসিল হয়েছে ভেবে একটু পরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে গারগল করেন তিনি। কিন্তু ব্যথা যাচ্ছিল না। দিনভর এভাবে চলার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সঙ্গে যোগ হয় শ্বাসকষ্ট। এবার ব্যথা-শ্বাসকষ্ট—দুটোই বাড়তে থাকে ক্রমশ। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি।
লুৎফুন্নাহারের বাসা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পাশে। স্বামী নেই। পরিবারে কেবল দুই মেয়ে। মাকে এ অবস্থায়
দেখে ঘাবড়ে যায় মেয়েরা। উপায় না পেয়ে দ্রুত যোগাযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। ইউএনও বিস্তারিত জেনে তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে বলে জানান। এর মধ্যে কোথাও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। আশপাশের হাসপাতালগুলোও বন্ধ। লুৎফুন্নাহারকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তাঁর মেয়ে ও ইউএনও নিজে।
রাত সাড়ে সাতটা কি আটটা। লুৎফুন্নাহারের মুঠোফোনে কল এল স্থানীয় সাংসদ সিমিন হোসেন রিমির। তিনি সার্বিক অবস্থা জেনে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স পাঠান। পরে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি সুস্থ।
>আক্রান্ত প্রায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে সাংসদ সিমিন হোসেনের। খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন, মনোবল বাড়াচ্ছেন।
উপজেলার দস্যুনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম খলিল (৩৪)। টানা তিন-চার দিন জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। সন্দেহ হলে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ৯ এপ্রিল পরীক্ষার ফল আসে করোনা পজিটিভ। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর সঙ্গেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন এই সাংসদ। পরে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাঁকেও নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে এখন তিনি সুস্থ।
শুধু লুৎফুন্নাহার বা ইব্রাহীম নন, কাপাসিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন বা উপসর্গ আছে, এমন জানলেই সরাসরি যোগাযোগ করছেন গাজীপুর-৪ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। সেই সঙ্গে দিচ্ছেন করোনা প্রতিরোধবিষয়ক পরামর্শ। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভরসা পাচ্ছেন, মিলছে তাঁদের মনেরও প্রশান্তি। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা যায়।
ওই রাতের স্মৃতিচারণা করে লুৎফুন্নাহার বলছিলেন, ‘ওই রাতে কোথাও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ইউএনও ম্যাডাম বিষয়টি এমপি আপাকে (রিমি) জানান। এরপর তৎক্ষণাৎ আপা আমার মোবাইলে কল দেন। আমার মেয়েদের সান্ত্বনা দিতে বলেন। পরে মোবাইলেই আমাকে কিছু ব্যায়াম করতে বলেন। আমি তাঁর কথামতো সেগুলো করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমে আসে। পরে রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’ আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় ওই সময়টাতে (বিপদ) আল্লাহ নিজে আপাকে আমার জন্য পাঠাইছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমার ও আমার মেয়েদের খেয়াল-খবর রাখছেন। এমনকি বাজার করে পর্যন্ত বাড়িতে পাঠাইছেন।’
ইব্রাহীম বলছিলেন, ‘আমি করোনা পজিটিভ, এটা জানার পরপরই আশপাশের সবার মধ্যে একধরনের নাকসিটকানো ভাব চলে আসে। আমাকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। আপা খবর পেয়ে ইউএনও ম্যাডামের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শুধু তা-ই নয়, অসুস্থ থাকাকালে আমার খেতে পাকা ধান নষ্ট হচ্ছিল। লোকজন পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর আপা নিজে স্থানীয় যুবলীগ কর্মীদের দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’
গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পুরো জেলায় করোনায় সংক্রমিত মোট রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে কাপাসিয়ায় রোগী ১২৭ জন। কাপাসিয়ায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১০ এপ্রিল। এরপর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৭ জনে। সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন। ঢাকা ও উপজেলার দুটি আইসোলেশন সেন্টারে থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন। বাকিরা চিকিৎসা নেন বাড়িতে।