ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এই দাবি জানান।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের সাহেব খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার ফিরোজা কালারের আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন। আমি বলব, আপনি আপনার ঘরকে আগে শিক্ষা দিন। আপনার ভাই কাদের মির্জা আপনার সম্পর্কে যেসব কথা বলেন, আপনাদের দলের নেতাদের সম্পর্কে বলেন, তারপরে তো আপনাদের থাকার কথা না। পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজেদের ঘরে মারামারি করে, দলাদলি করে ইতিমধ্যে দুজনকে হত্যা করেছেন। একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী।’
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। গত ৩১ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে আবদুল কাদের মির্জা ‘সত্যবচনের’ নামে আলোচনায় আসেন। গত ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। কাদের মির্জার কথিত ‘সত্যবচন’ সংঘাতের রূপ নেয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। এদিন তাঁর অনুসারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার নোয়াখালী প্রতিনিধি সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। এরপর কেন্দ্র থেকে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হন। গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষে নিহত হন আলাউদ্দিন (৩২) নামের এক ব্যক্তি। তাঁকে নিজের অনুসারী দাবি করেছেন মিজানুর। মিজানুরকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে, পৌরভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ভেতরে আছেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, কীভাবে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশটাকে দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তা তাঁরা দেখেছেন। সরকার দেশকে শোষণ করছে। এই সরকার খুব সুকৌশলে রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার কোনো ভিত্তি নেই। সেই মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, সরকার এখনো কৃষকের কোনো উপকার করেনি। নির্বাচনের আগে তারা বলেছিল, বিনা মূল্যে সার দেবে, ১০ টাকায় চাল দেবে। কিন্তু কৃষকেরা তা পায়নি। কৃষকদলকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য আদায় করে নিতে হবে। তাঁদের সেচ, স্বাস্থ্য, সন্তানদের পড়াশোনার দাবিগুলো তুলে ধরতে হবে।
বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বেলা তিনটায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
সম্মেলনের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। সভা সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব হাসান জাফির তুহিন।
সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, এখন কৃষকদের নিয়ে উপহাস করা হয়। কৃষকদের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল দেওয়া হয় না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। তাহলেই কৃষকেরা বাঁচবেন।
সদস্যসচিব হাসান জাফির বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।