ঐতিহ্যের ধারক নেত্রকোনার 'বালিশ মিষ্টি'
অঞ্চলভেদে যেমন মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে, তেমনি কিছু কিছু অঞ্চল বা এলাকা আজও তার ঐতিহ্যকে লালন করে। শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ নিয়েই গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগ। এ বিভাগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে স্বতন্ত্র একটি জেলা নেত্রকোনা। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বহুমাত্রিক সংস্কৃতি ধারণ করে আসছে জেলাটি। আর বর্তমানে জেলার অন্যতম পরিচিতি মিষ্টির কারণে। ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত এ মিষ্টি হচ্ছে ‘বালিশ মিষ্টি’।
গয়ানাথ নামের এক কারিগর আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে এ মিষ্টি তৈরি করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। এ জন্য অনেকেই একে গয়ানাথের মিষ্টি বা গয়ানাথের চমচমও বলে থাকেন। কেন এ মিষ্টি এত বিখ্যাত, তা অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগে। এ মিষ্টি অন্যান্য সাধারণ মিষ্টির মতো নয়। এ মিষ্টি আকার-আকৃতিতে অনেকটা বড়ই হয়ে থাকে। বালিশের মতো দেখতে বিধায় একে বালিশ মিষ্টি বলা হয়। একেকটি মিষ্টির ওজন প্রায় দুই কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটি স্বাদ, রং ও গন্ধে অনন্য। খুব বেশি খাদক না হলে এ মিষ্টি শেষ করা মোটেই সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে ক্রেতাদের চাহিদার ওপর বিবেচনা করে ছোট-বড় আকারে তৈরি করা হচ্ছে। এ মিষ্টি এখন নেত্রকোনায় নির্দিষ্ট গয়ানাথের দোকান ছাড়াও অনেক দোকানেই পাওয়া যায়।
বালিশ মিষ্টি তৈরি হয় দুধ, ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। মণ্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এরপর ঠান্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেওয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। এ ছাড়া বালিশ বানানোর প্রক্রিয়ায় কিছুটা গোপনীয়তা আছে, যা ব্যবসার স্বার্থে প্রকাশ করতে চান না কারিগরেরা।
বালিশ মিষ্টি নিয়ে এলাকার একটি রীতি আছে যে সেখানে কোনো বিয়েতে বর তার শ্বশুরবাড়িতে বালিশ মিষ্টি না নিয়ে গেলে তা রীতিবিরুদ্ধ হয়।
রাজেক হাসান: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]