জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চান বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশটা যে সুন্দরভাবে চলছে, দেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে, তাদের ভালো লাগছে না, তারা চায় একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের অনেকেই উন্নয়ন চোখে দেখে না বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না, দেখবে না। চোখ থাকতে তারা অন্ধ।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সদ্যগঠিত জোটের নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা নির্বাচন চায় কি চায় না, সেটাই বড় কথা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয় হবে।
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে নির্বাচন দাবির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু একটা রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে যে কোনো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেই রায় থাকা সত্ত্বেও আমাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী থেকে শুরু করে যারা বড় বড় আইনজীবী, তারা কীভাবে দাবি করে যে এখানে আরেকটা সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিটা কেন? কীভাবে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেই রায়ের পর আমাদের সংবিধান সংশোধন করেছি। ১৯৭২ এর সংবিধানে ঠিক যে রকম ছিল, যেভাবে নির্বাচনের জন্য যা যা লেখা ছিল, আমরা সেইভাবেই নিয়ে এসেছি।’
ড. কামালের নাম উল্লেখ না করে তাঁর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে একদিকে দাবি করবে সংবিধান রচয়িতা, অন্যদিকে আবার সেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করার জন্য নির্বাচনের অন্য ফর্মুলা দেবে। অনির্বাচিত একটা সরকার গঠন করতে বলবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে বলবে। এই আবদারটা কেন? কার স্বার্থে? কিসের স্বার্থে? সেটাই আমরা বুঝতে চাই। কী কারণে তারা এটা চাচ্ছে। তাদের যদি এত শক্তি থাকে জনগণের সঙ্গে আসবে, ভোট হবে।’
ইভিএম নিয়ে সরকারবিরোধীদের আপত্তিরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ইভিএম দিতে চাই, দ্রুত মানুষ ভোট দিতে পারে। তাতেও আবার আপত্তি কিসের? সেটাও আমরা বুঝতে পারি না। ইভিএম আজকে ইন্টারন্যাশনালে ব্যবহার করে। এতে কেউ কারও ভোট চুরি করতে পারবে না। তাহলে সেখানে কী করে তারা আপত্তি জানায়। তারা নির্বাচন চায় কি চায় না, সেটাই বড় কথা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকতে কথা বলা তো দূরের কথা, একটা সভাও করতে দেয়নি। আমরা কিন্তু সকলের জন্য সভা-সমাবেশ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কাউকে বাধা দিইনি। এখন একটা ঐক্যজোট হয়েছে। তারা মুখে বড় বড় কথা বলে আর দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এবং সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান তাদের সঙ্গে জোট করেছে। সেই দলসহ বিএনপি–জামায়াত জোটসহ ঐক্য হয়েছে। তারা বলল, আমরা নাকি তাদের মিটিং করতে দিচ্ছি না। সিলেটে তারা মিটিং করল। আগেই তারা বলে, আমাদের দিচ্ছে না। আমার যেটা মনে হয় যে তারা চায় আমরা তাদের বাধা দিই।’
আগামী সংসদ নির্বাচনেও জয়ের আশাবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জয় আমাদের হবেই। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। জনগণের ভোটেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আমার জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস আছে। যে উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে সকলের জীবনে লেগেছে, নিশ্চয় তারা সেটা ধরে রাখবে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেবে। আওয়ামী লীগের জয় হবে।’
,শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও আমরা উদ্যাপন করতে পারব। আমরা না থাকলে আর কেউ ভালোভাবে করতে পারবে না। কারণ, তাদের মনে পাকিস্তান। এখনো অনেকে বলে পাকিস্তান নাকি আমাদের চেয়ে বেশি উন্নত। যারা এটা বলে তাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। বলা উচিত, পাকিস্তানে গিয়ে দেখে আসেন। পাকিস্তানের ঋণ শোধের জন্য সৌদি আরব ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। আমাদের কারও কাছে কোনো ঋণ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডেলটা প্ল্যান ২১০০ আমরা করে রেখেছি, যাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকে। আর সেই গতি অব্যাহত থাকবে যদি আওয়ামী লীগ আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে। তাহলে মানুষ সুন্দর জীবন পাবে। প্রত্যেকটা গ্রাম শহরে রূপান্তর হবে। নাগরিক সকল সুবিধা গ্রামে বসেই পাবে।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবেই প্রমাণিত বিএনপি একটি দুর্নীতিবাজ দল। দেশটাকে তারা লুটে খেয়েছিল।