২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এমন কেন হলো, কারা পথভ্রষ্ট করল?

আবরার হত্যার বিচার চেয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ছবি: আবদুস সালাম
আবরার হত্যার বিচার চেয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ছবি: আবদুস সালাম

পড়া শেষে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে সেটাই পরিবারের চাওয়া। টুকটাক ঝামেলা বাদে সব ‘ঠিক’ আছে- এমনটাই পরিবার জানে। কিন্তু দেশের মেধাবীদের গড়ে তোলার শিক্ষালয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) যে শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয় পরিবারের কোনো ধারণাই ছিল না। তাই অভিভাবকের ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন- এমন কেন হলো? কারা ওদের পথভ্রষ্ট করল?

বুয়েটে হলভিত্তিক নির্যাতন, র‌্যাগিং ও ভিন্নমত প্রকাশের জেরে অত্যাচারের খবর এক এক করে প্রকাশ্যে আসছে। গত রোববার দিবাগত রাতে বুয়েট ছাত্রলীগের কিছু নেতা কর্মী বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা। ভিন্নমত প্রকাশের কারণ ও শিবির আখ্যা দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আবরার নিহত হওয়ার পরদিনই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আজ শুক্রবার পঞ্চম দিনের মতো তারা আন্দোলন করে এবং বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বৈঠক করে। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা ফটকের বাইরে সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে পুলিশ আবরার হত্যার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে। অমিত সাহারই এক ব্যাচমেটের মায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে হলে থাকত না। তবে পরীক্ষার আগে বা গ্রুপ স্টাডির প্রয়োজনে মাঝে মাঝে হলে আসত। হালকা পাতলা ঝামেলার কথা ও বলত। কিন্তু এখন যা শুনছি তা তো কল্পনাও করিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সব নির্যাতনের খবর আমরাই পাই। কিন্তু বুয়েটে এসব বছরের পর বছর হয়ে আসছে বুঝতেই পারিনি।’

বুয়েটে মেধাবীরাই ভর্তি হতে পারেন। যারা আবরারকে হত্যা করেছে তারাও মেধাবী জানিয়ে এই মা বলেন, ‘ওরা তো আমাদেরই ছেলে। কেন এমন হলো? স্কুল-কলেজে ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ওদের মাথায় কী ঢোকানো হয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি আমরাও দেখেছি। কিন্তু অত্যাচার বা মানুষ মারার রাজনীতি তো দেখিনি।’

আবরারে পরিবারের জন্য কষ্টের কথা জানিয়ে আরেক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘ওরা মানুষ মারার সাহস কীভাবে পেল? নিশ্চয় জানে ওদের বাঁচানোর জন্য কেউ আছে। তাই পিটিয়ে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। কারা ওদের পথভ্রষ্ট করল? ’ তিনি আরও জানান, সব বাবা-মা স্বপ্ন নিয়ে পাঠিয়েছেন এখানে। সন্ত্রাস করার জন্য না। কিন্তু এখান থেকে যারা ওদের সন্ত্রাসী হওয়ার দীক্ষা দিচ্ছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।

বিকেল পাঁচটার বৈঠকের আগে শিক্ষার্থীদের বুয়েট মিলনায়তনে ঢোকানোর জন্য মূল ফটক বন্ধ করে পকেট গেট দিয়ে সবাইকে ঢোকানো হয়। ফটকের ভেতর থেকে এক শিক্ষার্থী তাঁর মাকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু মা নাছোড়বান্দা। সন্তানের নিরাপত্তার চিন্তায় অস্থির। সঙ্গে না নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় কোনো অভিভাবকই নিজেদের পরিচয় দিতে চাননি। বুয়েটে নির্যাতনের কথা জেনে সন্তানদের নিয়ে বেশ চিন্তিত তাঁরা। তাঁদের ভয় অভিযুক্তরা যদি ছাড়া পেয়ে যায়, তখন তাঁরা হুমকির মুখে পড়বেন।

একাধিক অভিভাবক বুয়েট উপাচার্যের সমালোচনা করেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরে তিনি ক্যাম্পাসে আসেননি এমনকি জানাজায় অংশ নেননি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এত কিছু ঘটার পরেও তা নিরসন করতে না পারার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা।

আবরার হত্যার ঘটনায় দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জোরেশোরে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ১০ দফার অন্যতম দাবি এটি। আজ বৈঠকে উপাচার্য বুয়েটে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে অভিভাবকেরা জানান, ছাত্ররাজনীতি এ দেশে একসময় গৌরবময় ছিল, তবে এখন তা নোংরা রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে।

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কী ছিল রাজনীতির ধারা, আর কী হয়ে গেল? দলগুলোর নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কোনো কাজে এই ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা এখন নেই। এটা এখন বন্ধ হওয়াই উচিত।’