এভারেস্টের চার গুণ উঁচু, মিরপুর টু ফার্মগেট
পদ্মা নদী অত্যধিক খরস্রোতা। স্রোতে নদীর তলদেশে সেতুর পিলারের কাছে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে। ফলে এই সেতুকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভিত্তি মজবুত হওয়া জরুরি। আর ভিত্তি মজবুতের মূল হচ্ছে পাইলিং।
নদীর তলদেশে যত গভীরে এবং মোটা পাইল বসানো যায়, ততই ভিত্তি মজবুত হয়। এ জন্যই পদ্মা সেতুতে দীর্ঘ পাইল বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুতে ২৬২টি ইস্পাত বা স্টিল ও ৩২টি রডের পাইল ব্যবহার করা হয়েছে। ইস্পাতের পাইলের প্রতিটির ব্যাস তিন মিটার, যা একতলা ভবনের উচ্চতার সমান।
নদীর তলদেশে সর্বোচ্চ ১২৫.৫ মিটার বা ৪১১.৫০ ফুট গভীরে ইস্পাতের পাইলগুলো বসানো হয়েছে। এর অর্থ হলো—একটি ৪২ তলা ভবন যতটা উঁচু, ততটা গভীরতায় নদীর তলদেশে সবচেয়ে বড় পাইলটি বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুতে ইস্পাত ও রডের মিলিয়ে ২৯৪টি পাইল বসানো হয়েছে। প্রতিটি পাইল গড়ে ১২০ মিটার গভীরে বসানো হয়েছে ধরে জোড়া দিলে কি দাঁড়ায়? সব কটি পাইলের উচ্চতা হবে ৩৫ হাজার ২৮০ মিটার। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজারে ৮৪৮ মিটার। এর অর্থ হচ্ছে—পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত সব কটি পাইলের মোট উচ্চতা মাউন্ট এভারেস্টের চার গুণেরও বেশি।
মিরপুর টু ফার্মগেট
পদ্মা সেতুতে প্রথমে হয়েছে পাইলিং। এর ওপর তৈরি করা হয় পিলার। আর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে স্প্যান। স্প্যান হলো ইস্পাত বা স্টিলের মূল কাঠামো, যার ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসিয়ে যানবাহন চলাচলের পথ তৈরি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে মোট স্প্যান রয়েছে ৪১টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। স্প্যানগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ১৫০ মিটার বা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, যা ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ফার্মগেটের দূরত্বের সমান। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। ভায়াডাক্ট (নদীর বাইরের অংশ) হিসাবে ধরলে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।