এবারের সাহিত্যে স্বাধীনতা পদকটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আমির হামজা নামের ব্যক্তিকে দেওয়ার ঘোষিত সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, এ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা জাতির জন্য অসম্মানজনক। কীভাবে এমন একজন ব্যক্তি পুরস্কার পেলেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
আজ শুক্রবার এফডিসিতে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২২’-এর গ্র্যান্ড ফিনালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহ-উপাচার্য ড. গণেশ চন্দ্র সাহা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজাকারদের প্রকৃত তালিকা করা। রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এটা ছিল জনযুদ্ধ। আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে সত্য, কিন্তু সমসুযোগ ও সুশাসন বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা এখনো পাইনি। কেবল ভোটেই গণতন্ত্র নয়, সমসুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তাই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র।’
স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের চেয়েও বর্তমানে বড় সমস্যা ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতা উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে দেশপ্রেম ছিল, আজ সে দেশপ্রেম নেই, আজ কেবল আত্মপ্রেম। আজ সমাজের উন্নয়ন হচ্ছে না, হচ্ছে ব্যক্তির উন্নয়ন। যখনই সমাজে বিপদ আসছে, তখনই ধনীদের আরও উন্নয়ন হচ্ছে।’
বর্তমানে আমাদের দেশের সম্পদ ও মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়ন মানে কেবল দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট গড়া নয়, মেধাকে মুক্ত করা ও মেধার বিকাশ। আজ বিশ্ববিদ্যালয়েও গণতান্ত্রিক চর্চা নেই, ছাত্র সংসদ নেই, সংস্কৃতিচর্চা ও খেলাধুলা নেই। ফলে ছাত্রদের মেধার বিকাশ হচ্ছে না। তারা বিপথগামী হচ্ছে। বর্তমানে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো আমাদের সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। শুধু সম্পদ নয়, তার সঙ্গে মেধাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে উপযুক্ত মূল্যায়ন না হওয়ায় আমাদের মেধাবী সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, দেশ তাদের সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। পাকিস্তান থেকে আমরা স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের মতো পুঁজিবাদ ও আমলাতান্ত্রিকতা থেকে আমরা এখনো পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এবারের স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা একজন অচেনা ও অখ্যাত সাহিত্যিক কীভাবে পেলেন, তা এখন সবার কাছে প্রশ্ন।
স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে ঢাকা সিটি কলেজকে পরাজিত করে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বিতার্কিকেরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
চ্যাম্পিয়ন বিতার্কিক দলকে ৫০ হাজার টাকা, রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট, সনদ প্রদান করা হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ও পার্থ সঞ্জয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।