এবার বাংলাদেশি ৩ নারী জড়িত থাকার তথ্য
>• শ্রীলঙ্কায় মাদক চোরাচালান
• এ পর্যন্ত ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে কলম্বোর পুলিশ
• তাঁদের মধ্যে চারজনই নারী
• কলম্বোয় গত ৩১ ডিসেম্বর ২৭২ কেজি হেরোইন, ৫ কেজি কোকেনসহ ধরা পড়েন দুই বাংলাদেশি
• তদন্তে সহযোগিতা চেয়ে শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াজিরা আবিওয়ার্দানার ফোন।
• আগামীকাল রোববার ঢাকায় আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাদকের সবচেয়ে বড় চালান আটকের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর দেশটির পুলিশ মাদক চোরাচালানে জড়িত এক নারীসহ তিন বাংলাদেশির কথা বলেছিল। তাঁরা এখন কলম্বোয় নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন। নতুন করে যে তিন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা, তাঁরা সবাই নারী।
শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশকে জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে অভিযুক্ত ওই বাংলাদেশি নাগরিকেরা কলম্বোতে মাদক আনা–নেওয়ার কাজে জড়িত। তাঁরা কখনো ঢাকা থেকে সরাসরি কলম্বো আবার কখনো কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো হয়ে ঢাকায় আসা–যাওয়া করেছেন। বাংলাদেশি আরও কয়েকজন নাগরিক কলম্বোয় মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কলম্বোর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি তিন নারী হলেন শাহীনা আক্তার, রেহানা আখতার ও তানিয়া। এর মধ্যে শাহীনা আক্তার ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১০ বার শ্রীলঙ্কায় গেছেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি কখনো কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। কখনো কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো হয়ে কুয়ালালামপুরে গেছেন। আবার কখনো ঢাকা থেকে কলম্বো হয়ে আবার ঢাকায় ফিরেছেন। ওই ১৯ মাসে তিনি মূলত শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস ও মালিন্দো এয়ারে তিনটি গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেছেন।
শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ কলম্বোর বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে এক বাংলাদেশি শাহীনার সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ করতেন। তিনি এখন শ্রীলঙ্কায় নেই। অন্য দুই নারীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই তাদের কাছে।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাদকের সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে গত ৩১ ডিসেম্বর। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন দুই বাংলাদেশি বগুড়ার মোহাম্মদ জামালউদ্দিন ও জয়পুরহাটের দেওয়ান রফিউল ইসলাম। তাঁদের কাছ থেকে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন জব্দ করা হয়। কলম্বোর উপকণ্ঠ মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা মাদকের দাম প্রায় ১৫২ কোটি টাকা। যে ফ্ল্যাট থেকে মাদকের বিশাল এই চালান ধরা পড়েছে, তা ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শাহীনা এক বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানায় শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর কলম্বোর উপকণ্ঠের একই এলাকা থেকে ৩২ কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশি এক নারীকে, নাম সূর্যমণি। তিনি গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে কলম্বোয় পৌঁছান বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে একটি বিশেষ অভিযানে শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে আটক হয়েছিল ২৬১ কেজি মাদক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য দিয়েছে।
এদিকে ৩ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি রফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কলম্বোর একটি কূটনৈতিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে কলম্বো থেকে মুঠোফোনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীলঙ্কা সরকারের অনুরোধেই হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত ছিলেন। গতকাল জামালউদ্দিনকেজিজ্ঞাসাবাদ করেছেএসটিএফ। এ সময়ও হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীলঙ্কায় ধরা পড়ার আগে জামালউদ্দিন ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ৩০টি ইয়াবা বড়িসহ শহরের রূপকথা হাউজিং এলাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জামালের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলাটি বগুড়ার আদালতে বিচারাধীন।
শ্রীলঙ্কায় মাদকসহ গ্রেপ্তারের খবর ২ জানুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত হওয়ার পর বগুড়ায় জামালের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তাঁর সঙ্গে ধরা পড়া রফিউল ইসলামের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার রামনগর চাঁদপুর গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় কোনো মামলা নেই বলে পুলিশ জানায়।
শ্রীলঙ্কার পুলিশি হেফাজতে থাকা আরেক বাংলাদেশি নারী সূর্যমণি গত অক্টোবরের শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে কলম্বো যান। তাঁর বাড়ি লালমনিরহাটে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শ্রীলঙ্কার পুলিশকে বলেছিলেন বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানেন না। কিন্তু পরে জানা গেছে, সূর্যমণি ইংরেজির পাশাপাশি সিংহলি ভাষায় কথা বলতে পারেন।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় মাদক পাচারে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় করণীয় ঠিক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাল রোববার ঢাকায় আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।