এবার নিজের ঘোড়া নিয়ে মাঠে নামবে তাসমিনা

প্রথম আলোর দেওয়া ঘোড়া পেয়ে পিঠে উঠে বসল তাসমিনা। ছবিটি গতকাল তাসমিনার বাড়ির সামনে থেকে তোলা l প্রথম আলো
প্রথম আলোর দেওয়া ঘোড়া পেয়ে পিঠে উঠে বসল তাসমিনা। ছবিটি গতকাল তাসমিনার বাড়ির সামনে থেকে তোলা l প্রথম আলো

সেই বালিকা ঘোড়সওয়ার তাসমিনাকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকসুবল গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে ঘোড়াটি তাকে হস্তান্তর করা হয়। পছন্দের ঘোড়া পেয়ে তাসমিনা ভীষণ খুশি। এবার সে নিজের ঘোড়া নিয়েই মাঠে নামবে।
ছোটবেলা থেকেই তাসমিনার ঘোড়া ছোটানোর নেশা। প্রতিযোগিতায় খেলার মতো নিজের কোনো ঘোড়া ছিল না। তবু নেশার কারণে যেখানেই ঘোড়দৌড়ের আয়োজন হয়, তাসমিনা বাবার সঙ্গে সেখানেই যায়। অন্যের ঘোড়া জিতিয়ে দেয়। পুরস্কার যা পায়, ঘোড়ার মালিককে দিয়ে দিতে হয়। মেয়ের নেশার কারণে বাবা চুপ থাকতে পারেন না। কোথাও প্রতিযোগিতার কথা শুনলেই মেয়েকে নিয়ে ছোটেন। ২০১৫ সালের ১৭ জুন প্রথম আলোর অধুনা পাতায় ‘এক দুঃখিনী ঘোড়সওয়ারের গল্প’ শিরোনামে তাসমিনার ঘোড়দৌড়ে জেতার গল্পটি ছাপা হয়। ওই বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার এক ব্যবসায়ী তাসমিনাকে একটি ঘোড়া কিনে দেন। কিন্তু ঘোড়াটি চোখে দেখতে পেত না। সেই ঘোড়াটি তার কোনো কাজে আসেনি। পরে অল্প দামে বাবা ওবায়দুর রহমান ঘোড়াটি বেচে দেন।

.
.

নিভৃত গ্রামের এই বালিকা ঘোড়সওয়ারকে নিয়ে গত বছর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়। প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন তানহা জাফরীন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে এটি প্রথম প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি এ পর্যন্ত প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ১৩ লাখ বারের বেশি দেখা হয়েছে। আর ইউটিউবে দেখেছে প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ।
ওবায়দুর রহমান বলেন, যে ঘোড়াটি তাঁর মেয়ের পছন্দ হয়, তার মালিক সেটি বিক্রি করতে চান না। আবার বেচার জন্য অনুরোধ করলে তিনি অবাস্তব একটা দাম চেয়ে বসেন। এ জন্য ঘোড়া কিনতে দেরি হয়ে যায়। অবশেষে স্থানীয় ঘোড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে ময়মনসিংহের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘোড়াটি কেনা হয়। পরিবহন খরচসহ ২ লাখ টাকার মধ্যেই ঘোড়াটি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ঘোড়াটি মেয়ের মনের মতো হয়েছে। ঘোড়াটির বয়স খুবই কম। এটা এক নম্বরের ঘোড়া। ঘোড়াটি যেমন লম্বা-চওড়া, তেমনি তেজি। দৌড়াবে ভালো। তিনি খুশি হয়ে বলেন, সব ঘোড়ারই একটা নাম থাকে। তিনি এই ঘোড়ার নাম রেখে দেবেন ‘প্রথম আলো’।
অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তাসমিনা বলে, ‘এখন থেকে হামি নিজের ঘোড়া দিয়েই খেলমু।’
তাসমিনাকে ঘোড়াটি বুঝিয়ে দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বিক্রয় নির্বাহী আক্তারুজ্জামান সরকার, রাজশাহী বন্ধুসভার সদস্য ফারুক হোসেন ও তথাপি আজাদ, তাসমিনার বাবা ওবায়দুর রহমান, ধামইরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মালেক প্রমুখ।