এবার দেশে চীন-ভারতের নতুন টিকার পরীক্ষা

একাধিক উদ্যোগ থাকার পরও দেশে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়নি। এটা হওয়া দরকার। এতে দেশের লাভ আছে।

করোনাভাইরাসের টিকার প্রতীকী ছবি

চীন ও ভারতের টিকা একই সঙ্গে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। পরীক্ষার বিধিবিধান (ট্রায়াল প্রটোকল) পর্যালোচনার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, দুটি টিকাই এ দেশে পরীক্ষার অনুমোদন পাবে।

টিকা দুটির পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএমআরসির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দুটি দেশের দুটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে আইসিডিডিআরবি। তাদের দেওয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা চলছে।

ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ যৌথভাবে করোনার টিকা উদ্ভাবন করেছে। এর নাম ‘কোভ্যাক্সিন’। ভারতে এই টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে চাইছে আইসিডিডিআরবি। এই পরীক্ষার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কে জামান।

দুটি দেশের দুটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে আইসিডিডিআরবি। তাদের দেওয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা চলছে।
অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বিএমআরসির সভাপতি

অন্যদিকে চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের উদ্ভাবিত টিকাটির পরীক্ষার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি। নিউইয়র্ক টাইমস-এর তথ্য অনুয়ায়ী, গত ডিসেম্বরে চীনের এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু হয়েছে ব্রাজিল ও মালয়েশিয়ায়। সেখানে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষার সম্ভাবনা আছে।

গতকাল দুপুরে বিএমআরসি কার্যালয়ে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও গবেষণা নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহামুদুজ্জাহানের সঙ্গে । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামারির গুরুত্ব বিবেচনায় পর্যালোচনার কাজে বেশি সময় লাগবে না।’ তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যালোচনার পর কাগজপত্র পাঠানো হবে ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটির কাছে। এথিকস কমিটি সন্তুষ্ট হলে টিকা পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই পরীক্ষা থেকে দেশ লাভবান হবে কি না এবং এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা গড়ে উঠবে কি না, সে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভারতের টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে রাজধানীর আটটি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ মোট ৬ হাজার ৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর। হাসপাতালগুলোর তালিকায় আছে: শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি ইম্পালস হাসপাতাল। অন্যদিকে চীনের টিকাটি প্রয়োগ করা হবে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বাংলাদেশে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হওয়া দরকার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও ওষুধ বিজ্ঞানীরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার ফলাফল ভোগ করব, নিজেরা কোনো পরীক্ষায় অংশ নেব না—এটা খুব একটি সম্মানজনক কথা নয়। পরীক্ষায় অংশ নিলে টিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমাদের সক্ষমতা তৈরি হবে, দক্ষতা বাড়বে। পরীক্ষায় অংশ নিলে ওই টিকার ওপর একধরনের অধিকার জন্মে। টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরির একটা সুযোগ তৈরি হবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে।’

আমরা পরীক্ষার ফলাফল ভোগ করব, নিজেরা কোনো পরীক্ষায় অংশ নেব না—এটা খুব একটি সম্মানজনক কথা নয়। পরীক্ষায় অংশ নিলে টিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমাদের সক্ষমতা তৈরি হবে, দক্ষতা বাড়বে।
মো. সায়েদুর রহমান, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক

এর আগে চীনা কোম্পানি সিনোভেকের টিকা ‘করোনাভেকের’ পরীক্ষামূলক প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল আইসিডিডিআরবি। পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছিল বিএমআরসি। তবে অনুমোদনের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, মহামারি পরিস্থিতিতে টিকার জন্য বিএমআরসির অনুমোদন যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন পরীক্ষার অনুমতি দেয়, তখন সিনোভেক পরীক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা চায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে। সরকার তাতে রাজি হয়নি। প্রস্তুতি থাকলেও পরীক্ষা চালাতে পারেনি আইসিডিডিআরবি। সিনোভেকের টিকা এখন চীনে ব্যবহার হচ্ছে।

এরপর ফরাসি ওষুধ কোম্পানির স্যানোফির টিকার পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় বিএসএমএমইউ। এই পরীক্ষার প্রধান গবেষক ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া। কিন্তু স্যানোফি মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করায় বিএসএমএমইউ আর অগ্রসর হয়নি।

বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক টিকা উদ্ভাবন করছে। এর নাম ‘বঙ্গভ্যাক্স’। এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তিন দিন আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য টিকা উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে গ্লোব বায়োটেককে।

এ ছাড়া চীনের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান আনুই জিফেইয়ের একটি টিকা পরীক্ষায় সম্মতি দেওয়ার কথা সরকার ভাবছে। বিএসএমএমইউ এই টিকার পরীক্ষা করবে, এমন সম্ভাবনা আছে।