এত কিছু বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়েন: প্রধানমন্ত্রী

একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: পিআইডি

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এত কিছু বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়েন। এই বিনোদনের এত অর্থ কোত্থেকে আসে, এটা দেশবাসী বিচার করবে। আইন আইনের গতিতে চলবে।

আজ রোববার একাদশ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

হেফাজতে ইসলাম পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চরিত্র কেমন তা মানুষ দেখেছে। তিনি বলেন, পারলারে কাজ করা এক মহিলা। এদিকে বউ হিসেবে পরিচয় দেন। আবার নিজের বউয়ের কাছে বলেন যে ‘অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলে ফেলেছি।’ যাঁরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন, এ রকম মিথ্যা কথা বলতে পারেন? অসত্য কথা তাঁরা বলতে পারেন? তাঁরা তো মিথ্যা বলতে পারেন। কাজেই তাঁরা কী ধর্ম পালন করবেন? মানুষকে কী ধর্ম শেখাবেন?

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘হেফাজতের সদস্যদের অনুরোধ করব, যেন বুঝে নেন যে কোন নেতৃত্ব তাঁদের। জ্বালাও-পোড়াও করে তিনি বিনোদন করতে গেলেন একটি রিসোর্টে। একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এঁরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে তাঁরা ছোট করছেন। কিছু লোকের জন্য আজ এই ধর্ম জঙ্গির নাম, সন্ত্রাসের নাম।’

হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার পেছনে বিএনপির পরামর্শ ও সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে যে সংঘাত–সহিংসতা হয়েছে, তাতে হেফাজতে ইসলাম একা নয়, তাদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি রয়েছে। হেফাজতকে তাণ্ডব, জ্বালাও–পোড়াওয়ের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ধৈর্য ধারণ করেছে। কারণ, সরকার সংঘাত চায়নি। তারা আগুন নিয়ে খেলছে। কিন্তু তাদের মাথায় রাখতে হবে, এক ঘর থেকে আগুন আরেক ঘরেও যেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, হেফাজতের সবাই যে এর মধ্যে জড়িত, তা–ও কিন্তু নয়। হেফাজতে ইসলামের জ্বালাও–পোড়াওয়ের ঘটনার বেশ কিছু ছবিও জাতীয় সংসদে দেখান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবাইকে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে। ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ জনগণ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ কখনো সহ্য করবে না। পবিত্র ধর্মকে কেউ অসম্মান করবেন, সেটা আমরা চাই না। এ ধরনের অপকর্মে যাঁরা জড়িত, আইনানুগ ব্যবস্থা তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদি আসবেন। তাঁকে আসতে দেওয়া যাবে না। বাধা দেওয়া কেন? আমার এই প্রশ্ন। আজ হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়। তারা কী দেওবন্দে যায় না শিক্ষা গ্রহণ করতে? তারা এসব ঘটনা যদি ঘটায়, তাহলে উচ্চশিক্ষায় দেওবন্দে যাবে কীভাবে? সেটা কী একবারও চিন্তা করেছে?’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কওমি মাদ্রাসার সনদ দিচ্ছে। কারিকুলাম ঠিক করে দিয়েছে। তাঁরা দেশ-বিদেশে যাতে চাকরি পান, তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। তারপরও তাঁরা এই তাণ্ডব কেন ঘটালেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, গুজব ছড়িয়ে ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে সহিংসতা চালানো হয়। ২৭ ও ২৮ তারিখ হেফাজতের পক্ষে বিএনপি–জামায়াতের বিবৃতি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কেন ধৈর্য দেখিয়েছে, এ প্রশ্ন এই সংসদে এসেছে। সরকার ধৈর্য দেখিয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তী ভালোভাবে উদ্‌যাপন করতে চেয়েছে। তাঁরা যা করেছেন, দেশবাসী বিচার করবে। আর আইন তার আপন গতিতে চলবে।

শেখ হাসিনা বলেন, মুখে ধর্মের কথা বলে অধর্মের কাজ করা গ্রহণযোগ্য নয়। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করে। যার যার ধর্ম মানুষ পালন করবে। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মে বদনাম হবে, এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রশ্ন রেখে গেলাম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও যান। সেখানে ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে হাত বাড়ালেন। খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন, কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদি সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা ছবি। সেই হাত যেন আর ছাড়েনই না। তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে সেই খিলখিল করা হাসির আওয়াজ, সেটাও সবার কানে বাজে। আবার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন মোদি আসবেন, সেখানে বাধা দেওয়া। আর হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলানো কেন? এ প্রশ্নের জবাব কোত্থেকে পাব জানি না। তবে এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।’