এডিস মশা নিয়ে দুই দপ্তরের দুই মত
চট্টগ্রামে এডিস মশার অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। তবে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্র জানায় ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এডিস মশার কারণেই স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছে বলে রোগী ও স্বজনদের দাবি।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে সরকারিভাবে ২৩০ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকাল নতুন করে ৩২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর পাশাপাশি ২০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ৭৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালের পাশাপাশি ব্যক্তিগত চেম্বারেও পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আক্রান্তও হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে আক্রান্তও ৩০ শতাংশের কম নয়।
এদিকে গতকাল বিকেল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে দুজন, রয়েল হাসপাতালে একজন, ম্যাক্স হাসপাতালে একজন, পার্কভিউ হাসপাতালে দুজন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে তিনজন, ন্যাশনাল হাসপাতালে একজন এবং লোহাগাড়া উপজেলায় একজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
>চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
চট্টগ্রামে সরকারিভাবে ২৩০ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে
নতুন করে ৩২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ ঢাকার। তবে এখানে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয়। এটা প্রায় ২০ শতাংশ হবে। তবে সিটি করপোরেশন দাবি করেছে চট্টগ্রামে এডিস মশার অস্তিত্ব নেই। আক্রান্তরা সবাই ঢাকা থেকে আসা রোগী বলে করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ দাবি করে। প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশা নেই। যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত সবাই ঢাকা থেকে এসেছে। তার পরও আমরা প্রতিদিন ৪১ ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি।’
তবে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এখন চিকিৎসা নিচ্ছে। নগরের হাজারি গলি এলাকায় একই ভবনের চারজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের কেউ ঢাকায় যায়নি। সবাই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়।
হাজারি গলির বাসুদেব কমপ্লেক্স নামের ভবনটির বাসিন্দা তাঁরা। গীতা দেব (৬০) এবং তাঁর নাতনি প্রিয়ন্তি দেব (১৩) সপ্তাহখানেক ধরে ভর্তি রয়েছেন। তাঁরা ভবনটির দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা। একই ভবনের তৃতীয় তলার টিংকু দাশ (২৩) ও তাঁর ভাই রাজীব দাশও (২৫) একই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা।
প্রিয়ন্তীর বাবা তাপস দেব বলেন, এই চারজনের কেউ ঢাকায় যায়নি। সবাই ওই ভবনে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ভবনের পাশের নালাটি অপরিচ্ছন্ন। পাশাপাশি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ফুলের টব থেকে এডিস মশার জন্ম হয়—যার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।
একইভাবে নগরের দেওয়ানহাট মিস্ত্রিপাড়ার নিরাপত্তাপ্রহরী কাশেম, দিনমজুর বাবর আলী ও মাদ্রাসাছাত্র হেলাল উদ্দিন চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। তিনজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, তাঁরা এর মধ্যে ঢাকায় যাননি। হেলাল বলেন, মিস্ত্রিপাড়ায় অনেক ময়লা–আবর্জনা। এ কারণে এডিস মশা হচ্ছে সেখানে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে।
গতকাল জামালখান ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে। এই ওয়ার্ডের আসকারদিঘীটি অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এখান থেকে এডিস মশার উৎপত্তি হয়।