সমকালীন সমাজে একটা মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আগে যে সামাজিক বন্ধনগুলো ছিল, সেগুলো থেকে তরুণ-তরুণীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তিনটি জায়গায় তরুণেরা আগে দৃঢ়বদ্ধ ছিল। একটি জায়গা হচ্ছে পরিবার, দ্বিতীয় বন্ধু গোষ্ঠী, তৃতীয় হচ্ছে সমাজ। এসব জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তরুণেরা এখন অলীক এক জগতে চলে যাচ্ছে, যেখানে সেই অর্থে কোনো নিরাপত্তাবলয় নেই। যেটি আগে পরিবার, বন্ধু ও সমাজে ছিল। যে পরিবর্তনের সঙ্গে তরুণেরা যুক্ত হচ্ছে, সেটি তাদের মা-বাবার জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তরুণেরা এখন বিশ্বাস করার মতো অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছে না। এ জন্য নিরাপত্তাবোধের এই অভাব তরুণেরা অনুভব করছে। দুই প্রজন্মের মাঝে সাধারণ যে পার্থক্য থাকে এই পরিবর্তনটি সেদিক থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন। এতে একক ও সামষ্টিকভাবে আত্মপরিচয় সংকট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে পুরোনো চাকরির পরিবর্তে নতুন যেসব চাকরি আসছে, সেটাও একধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এ জন্যই তরুণদের জীবন এখন অনেক বেশি অনিরাপদ একটা অবস্থানে চলে গেছে। যেসব তরুণ সংকটের জায়গাগুলো বুঝতে পারছে, তারা নিজেদের পেশাজীবনের উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাউন্সেলিং, পারিবারিক পরিচর্যার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এটা করা গেলে এসব সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সামগ্রিকভাবে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তরুণদের সচেতন করার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
তরুণদের আগে যে একটা ভাবাদর্শগত অবস্থান ছিল সেটা এখন আর নেই, এখন তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। এটা পুরো সমাজেরই পরিবর্তনের একটি প্রতিচ্ছবি। এর চেয়ে এখন তরুণদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আকর্ষণ অনেক বেশি।
সাবেক অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়