একজন মাদক ব্যবসায়ী, অন্যজন কৃষকের সন্তান

>

• গত ৩১ ডিসেম্বর কলম্বোয় মাদকবিরোধী অভিযান
• অভিযানে হেরোইন–কোকেনসহ দুই বাংলাদেশি আটক
• আটক মাদকের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫২ কোটি টাকা
• গ্রেপ্তার জামাল ২০১৭ সালে বগুড়ায় ইয়াবাসহ ধরা পড়েন
• ধরা পড়া রাফিউলের বাবা রফিকুল অবস্থাপন্ন কৃষক

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালানসহ আটক দুই বাংলাদেশির অন্যতম মোহাম্মদ জামালউদ্দিন বগুড়ার পুলিশের নথিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের একটি মামলা বগুড়ার আদালতে বিচারাধীন। অন্যজন জয়পুরহাটের দেওয়ান রাফিউল ইসলাম অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবারের সন্তান। সেখানে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ গত ৩১ ডিসেম্বর কলম্বোর মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেনসহ ওই দুই বাংলাদেশিকে আটক করে। আটক মাদকের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫২ কোটি টাকা।

বগুড়ার পুলিশ বলেছে, শ্রীলঙ্কায় ধরা পড়ার আগে মোহাম্মদ জামালউদ্দিন ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ৩০টি ইয়াবা বড়িসহ শহরের রূপকথা হাউজিং এলাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে জামালউদ্দিনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছিলেন। তদন্ত শেষে বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক নাছিম উদ্দিন একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলায় জামালউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলাটি বগুড়ার একটি আদালতে বিচারাধীন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ জামালউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী পুলিশের নথিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। দুজনই মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। জামালের বাড়ি ময়মনসিংহে, বগুড়ায় বিয়ে করে শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আদালতে ইয়াবা পাচারের মামলা বিচারাধীন থাকলেও বগুড়ার ঠিকানায় জামালউদ্দিনের নামে গত বছরের ৭ নভেম্বর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। তাঁর নামে একাধিক ব্যাংক হিসাবের হদিস পাওয়া গেছে এবং এসব ব্যাংক হিসাবে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলেছে, গতকাল দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকায় জামালের বাসায় গিয়ে তাঁর কক্ষ তল্লাশি করে। এ সময় জামালের শাশুড়ি ও স্ত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ জামালের শয়নকক্ষ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করে। ওই মুঠোফোনে দেখা গেছে, ধরা পড়ার আগে জামাল শ্রীলঙ্কা থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জামালের স্ত্রী শামিমা জামাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী সপ্তাহখানেক আগে শ্রীলঙ্কায় গেছেন। সেখান থেকে ফোনও করেছেন। তবে মাদকের বিপুল চালানের সঙ্গে জামালের ধরা পড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।

জয়পুরহাট সদর থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় জামালের সঙ্গে ধরা পড়া দেওয়ান রাফিউল ইসলামের বাড়ি জেলার সদর উপজেলার চকবরকত ইউনিয়নের রামনগর চাঁদপুর গ্রামে। তাঁর বাবা দেওয়ান রফিকুল ইসলাম অবস্থাপন্ন কৃষক। রাফিউলরা চার ভাই ও দুই বোন। তাঁদের মধ্যে সবার ছোট রাফিউল ২০০৮ সালে জয়পুরহাট শহরের শহীদ জিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকায় গিয়ে একটি বায়িং হাউজে চাকরি নেন। চাকরি করা অবস্থায় কাপড়ের ব্যবসা–সংক্রান্ত কাজে তাঁকে বিদেশে যাতায়াত করতে হতো বলে তাঁর পরিবার জানত। তবে তিনি চীন ছাড়া অন্য কোন কোন দেশে যাতায়াত করেছেন, তা তাঁর পরিবার বলতে পারেনি। ১০-১২ দিন আগে রাফিউল কাপড়ের ব্যবসার কাজে শ্রীলঙ্কায় যাবেন বলে বাড়িতে থাকা তাঁর মামাতো ভাই রামিন হোসেনকে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন।

জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল হক বলেন, শ্রীলঙ্কায় রাফিউলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুলিশ জেনেছে। ওই পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে জয়পুরহাট সদর থানায় ওই পরিবারের কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।