>
- ২০১০ সালে প্রথম চিঠি পাঠানো হয়
- চিঠি যায় অন্তত অর্ধশতবার
- একযুগ পর উত্তর এল চিঠির
গত বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টা। হাফিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি আসেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাঁরা জানান, তাঁরা ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে এসেছেন। প্রতিষ্ঠানের তাঁরা সিনিয়র টেকনিশিয়ান। উদ্দেশ্য, হাসপাতালের বিকল যন্ত্রাংশের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে করণীয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো।
তবে ওই দুই ব্যক্তির আকস্মিক আগমনে বিস্মিত হন হাসপাতালের অনেকে।
জানা গেছে, হাফিজুর ও মোস্তাফিজুর দিনব্যাপী হাসপাতালে অবস্থান করে এক্স-রেসহ বিকল যন্ত্রাংশগুলোর ত্রুটি শনাক্ত করেন। পরে তৈরি করেন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের এক কপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য রেখে যান। আরেক কপি নিয়ে যান নিমিউ অ্যান্ড টিসির প্রধান কারিগরি ব্যবস্থাপক আমিনুর রহমানের জন্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিকার চেয়ে অসংখ্যবার চিঠি গেল নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে। উত্তরের জন্য সে কী অপেক্ষা! উত্তর আর আসে না। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। শেষে আশার আলো জেগে উঠল।
হাফিজুর রহমান জানান, কর্তৃপক্ষের জরুরি নির্দেশ পেয়ে তাঁরা ভৈরব হাসপাতালে এসেছেন। যন্ত্রগুলো ভালো করে দেখা হয়েছে। সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। সবগুলো যন্ত্র মেরামতযুক্ত। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবগুলো যন্ত্র মেরামত করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৫ জুন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একটি এক্স-রে যন্ত্র (৩০০ এমএ) পাঠানো হয়। যন্ত্রটি পাঠানোর আড়াই বছর পর্যন্ত বাক্সভর্তি ছিল। শেষে ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিস্থাপন করা হয়। পরে চার মাস অতিক্রম না করতেই বিকল হয়ে যায়। এরপর প্রথম চিঠিটি পাঠানো হয় ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। এরপর থেকে চিঠি পাঠানো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়মিত কাজের অংশ হয়ে যায়। চিঠি যায় অন্তত অর্ধশতবার। কিন্তু চিঠির উত্তর আসে না। এই সময়ের ব্যবধানে অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, পোর্টেবল রিচার্জেবল ও টি–লাইট, ইনকিউবেটর, মেডিসিন ফ্রিজ, সেমি অটো–এনালাইজার, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, সেন্ট্রিফিউজ মেশিন, মাইক্রোস্কোপ, সাকার মেশিন, ওটি টেবিল, ডায়াথার্মি মেশিন ও ডেন্টাল চেয়ার অকার্যকর হয়। এসব যন্ত্রের মেরামতের জন্যও একই বিভাগে অসংখ্যবার চিঠি দিয়ে প্রতিকার মিলছিল না। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এক যুগে অর্ধশতাধিক চিঠি, তবু সচল হয়নি এক্স-রে যন্ত্র’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদ ছাপার দিনই নিমিউ অ্যান্ড টিসি কর্তৃপক্ষ যন্ত্রগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানের দুই প্রতিনিধিকে পাঠায়।
হাসপাতালের হিসাব ও ভান্ডাররক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যন্ত্রগুলো কার্যকর হলে হাসপাতাল কর্মরতদের সঙ্গে সেবাপ্রত্যাশীর সৃষ্ট ভুল–বোঝাবুঝির কিছুটা হলেও অবসান হবে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা কে এন এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের এখন অপেক্ষা যন্ত্রগুলো কখন কার্যকর হবে। যত তাড়াতাড়ি সচল করা যাবে, তত দ্রুত সেবাপ্রত্যাশীর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’