এক বছরে বিসিএস শেষ করার উদ্যোগ
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে মৌখিক পরীক্ষা। মোট চাকরিপ্রার্থী ১০ হাজার ৯৬৪ জন। পিএসসি জানিয়েছে, এখন যেভাবে কাজটি চলছে, সেভাবে চললে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে আগামী জুনে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা সম্ভব।
প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে এই বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করতেই প্রায় তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এরপর নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই (ভেরিফিকেশন), স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে চাকরির প্রজ্ঞাপন জারি হতে কমপক্ষে আরও এক বছর লাগবে। অর্থাৎ বিসিএসে চাকরি পেতে একজন তরুণকে কমপক্ষে চার বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
৪০তম বিসিএসের পাশাপাশি ৪১তম, ৪২তম ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কার্যক্রমও চলছে। ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ১৬৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের শেষ দিকে। মোট আবেদনকারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ জন।
একেকটি বিসিএস শেষ করতে এত দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে চলমান চারটি বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করে পরবর্তী বিসিএস থেকে এক বছরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে প্রার্থী নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছে পিএসসি। এ জন্য সময়সীমা ধরে একটি পথনকশা (রোডম্যাপ) করেছে পিএসসি।
পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেছেন, ৪৪তম বিসিএস থেকে তাঁরা এই পথনকশা অনুযায়ী কাজটি করবেন। কাজটি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তার আগে চলমান চারটি বিসিএসের জট খুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
বিসিএসের জট
৪০তম বিসিএসের পাশাপাশি ৪১তম, ৪২তম ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কার্যক্রমও চলছে। ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ১৬৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের শেষ দিকে। মোট আবেদনকারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ জন।
পিএসসির চেয়ারম্যান বলেছেন, এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গত বছর নেওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সেটি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ মার্চ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অবশ্য পিএসসি ১৯ মার্চ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে চাইলেও একদল আবেদনকারী করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওই পরীক্ষা পেছানোর দাবি করছেন। তবে পিএসসি এখনো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রথমত, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দ্বিতীয়ত, একটি বিসিএস এক বছরের মধ্যেই শেষ করা উচিত এবং এটি সম্ভব। কিন্তু সদিচ্ছা ও কিছু ভুল নিয়মের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
৪২তম বিশেষ বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২০০ নম্বরের প্রথম ধাপের পরীক্ষা। এরপর ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করবে পিএসসি।
৪৩তম বিসিএসের আবেদনের সময় দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনার বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে। সরকার বলেছে, এই ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়ও পেছানো হবে। পিএসসি চেয়ারম্যান বলেছেন, এই বিসিএসের আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হবে।
এক বছরে বিসিএস শেষ করতে পথনকশা
পিএসসির সূত্র জানিয়েছে, তাদের করা পথনকশায় বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া এবং ফল প্রকাশের কার্যক্রম ৯৫ দিনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন (আবেদন) কার্যক্রম চলবে ৩০ দিন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কার্যক্রম চলার সময়েই লিখিত পরীক্ষার (আবশ্যিক) প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশন করার কাজটি চলবে। এরপর ১২৭ দিনে শেষ করা হবে লিখিত পরীক্ষার পুরো কার্যক্রম। এর মধ্যে সাত দিনে আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা এবং ১২ দিনে পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে মোট ৭৫ দিনে। বাকি দিনগুলোতে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ অন্য কাজগুলো করা হবে। মৌখিক পরীক্ষার পুরো কার্যক্রমের জন্য ধরা হয়েছে ১১০ দিন। এর মধ্যে ১০০ দিনে নেওয়া হবে মৌখিক পরীক্ষা। বাকি দিনগুলোতে আনুষঙ্গিক কাজগুলো করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে পিএসসির পথনকশায়।
পিএসসি মূলত সরকারের চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই করে দেয়। নিয়োগ দেয় সরকার। দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ের বড় লক্ষ্য থাকে বিসিএসের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া। সাম্প্রতিক কালে বিসিএসের চাকরির আকর্ষণ অনেক বেশি। বিপরীতে একেকটি বিসিএস শেষ করতে এত দীর্ঘ সময় লাগায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে।
এক বছরের মধ্যে একেকটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি সম্ভব কি না, জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দ্বিতীয়ত, একটি বিসিএস এক বছরের মধ্যেই শেষ করা উচিত এবং এটি সম্ভব। কিন্তু সদিচ্ছা ও কিছু ভুল নিয়মের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।’