এক দিনের জন্যও থামেনি নির্মাণকাজ
পদ্মায় মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে একটানা চলেছে নির্মাণকাজ। ভরা বর্ষায় পদ্মার খরস্রোত, বন্যা কিংবা করোনা মহামারি—কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কিছু সময়ের জন্য কাজের গতি কমলেও নির্মাণকাজ থেমে যায়নি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজটি বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। পুনর্বাসন, পরিবেশ উন্নয়ন ও জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রথমে শুরু হয়। এরপর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ। সার্ভিস এরিয়া, মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়ক, মূল সেতুর নির্মাণকাজ ধাপে ধাপে শুরু হয়। সবার শেষে শুরু হয় নদীশাসনের কাজ।
সাধারণত সেতু স্টিলের অথবা কংক্রিটের হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুটি হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত। খুঁটি ও যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে এ স্প্যান বসানো হয়। ওই বছর আর কোনো স্প্যান বসানো যায়নি। দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে ১১৯ দিন পর। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই স্প্যান বসানো হয়। ওই বছর সব মিলিয়ে চারটি স্প্যান বসে।
পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা থেকে মাওয়া এবং জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা। এটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)। ২০১৬ সালে এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে।
মূল সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করেছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে আবদুল মোনেম লিমিটেড। সার্ভিস এলাকা (নির্মাণ অবকাঠামো) নির্মাণের কাজও করেছে মোনেম লিমিটেড। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার নির্মাণকাজ তদারক করছে সেনাবাহিনী। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ তদারকি করছে কোরিয়াভিত্তিক এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি।