এই চাঁদ দেখা কমিটি লইয়া আমরা কী করিব?
আমাদের মুশকিল হলো আমরা যুক্তি মানতে চাই না। রোজা ও ঈদের ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে চাঁদ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে। অর্থাৎ রোজা শুরু হবে রমজান মাসের চাঁদ দেখে এবং রমজান শেষ হবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে। ঠিক আছে। এতে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে অলিখিত একটা ধারণা হলো সৌদি আরবে রোজা শুরুর এবং ঈদের পরদিন বাংলাদেশ রোজা শুরু বা ঈদ হয়। এভাবেই হয়ে আসছে ব্যতিক্রম ছাড়া। আমার কথা হলো সৌদি আরব আমাদের সময়ের পার্থক্য মাত্র তিন ঘণ্টা। জ্যোতির্বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান যদি মানি, তাহলে তিন ঘণ্টার জন্য আমাদের দেশে চাঁদ দেখার সময়ের পার্থক্য পাক্কা ২৪ ঘণ্টা কেন হবে?
আরেকটা কথা বলি, আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটিতে কেন কোনো বিজ্ঞানী থাকেন না? যাঁরা থাকেন, তাঁরা কি কেউ আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখেন? আমাদের কি যথেষ্ট যন্ত্রপাতি কি আছে, অন্তত মেঘলা আকাশে চাঁদ দেখার মতো? কিংবা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো লোকবল কি আছে? প্রতি মাসেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাঁদ দেখা কমিটিকে। তাহলে সেটা তো বিজ্ঞানভিত্তিকই হওয়া উচিত, নাকি?
আজকের ঘটনা
যেহেতু সৌদি আরবের চাঁদ দেখার সময়ের পার্থক্য যেখানে মাত্র তিন ঘণ্টা, সেখানে আমরা ২৪ ঘণ্টা পর ঈদ উদযাপন বা রোজা পালনে অভ্যস্ত। সেখানে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধান মেনে নেওয়াটা কঠিন। চাপিয়ে দেওয়া মনে হয়। অথচ দেখুন চাঁদ দেখা কমিটি সন্ধ্যায় শুধু চাঁদ না দেখার ঘোষণা দেয়নি, তারা ঈদের দিনও ঠিক করে দিয়েছিল। বুধবার না। বৃহস্পতিবার ঈদ। ভালো কথা। বেশির ভাগ মানুষ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছিল; আমার মতো দু-একজন ছাড়া। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, যে চাঁদ দেখা কমিটি সন্ধ্যায় ঘোষণা দিল, দেশের কোথাও চাঁদ যায়নি, সেই কমিটি কীভাবে রাত ১১টায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়? প্রথম দিনের চাঁদ তো এতক্ষণ আকাশে দৃশ্যমান থাকার কথা নয়। তবে কীভাবে ঘোষণা দিল? কীভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো জানা যাবে না। তবে অনুমান করা যায়, জাতীয় দেখা কমিটি সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেনি। রাত ১১টায় তো দেখার কোনো কারণই নেই। অর্থাৎ তারা দুটো ঘোষণাই দিয়েছে চাঁদ না দেখে। তবে এই চাঁদ দেখা কমিটি লইয়া আমরা কী করিব? তারা কেন মেঘলা আকাশেও দেখার মতো স্বাবলম্বী হবে না?