ঈদের সময় গণপরিবহন বন্ধ রাখার চিন্তা
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল সভায় ঈদে পোশাকশ্রমিকদের ছুটি না দেওয়ার প্রস্তাব। পরিবহন খাতকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে আলোচনা।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় ঈদুল ফিতরের সময় আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এই সময়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাস চলাচল করবে না। শ্রমিকদের যাতে ঈদের সময় ছুটি না দেওয়া হয়, সে প্রস্তাব পাঠানো হবে পোশাক কারখানার মালিকদের কাছে।
অন্যদিকে বিপণিবিতানগুলোতে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়, তবে দু-এক দিন দেখে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার জরিমানাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর জন্য সরকার ‘চলমান লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ’ বিষয়ে গতকাল রোববার এক ভার্চ্যুয়াল সভায় উপস্থিত মেয়র, সচিব, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের কাছ থেকে এমন প্রস্তাব উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের মেয়াদ ৫ মে শেষ হবে। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই গতকাল এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পরিবহন বন্ধ করতে হলে সব বন্ধ রাখতে হবে। আর নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ঈদের পরে নেওয়ার মতামত দেন তিনি। আইজিপি বলেন, এখন ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের সময়। সরকার এখন বেশি শক্ত হবে কি না, তা বিবেচনার বিষয়। তিনি ঈদের পরের তিন সপ্তাহ কড়াকড়ি করার কথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আন্তজেলা বাসগুলো ঢাকার ভেতরে না ঢুকে যেন ঢাকার বাইরে টার্মিনালে থাকে। তিনি আন্তজেলা লঞ্চ ও রেলওয়ে বন্ধ থাকার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, সদরঘাট, কমলাপুর, সায়েদাবাদ—তিনটি জায়গা জনসমাগমের উৎস। এই তিন স্থান বিবেচনায় রেখে যেন লকডাউনের রূপরেখা তৈরি করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর এলাকার মধ্যে বিমানবন্দর স্টেশন, মহাখালী ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, এই তিন স্থানে জনসমাগম হয়। এ ছাড়া তিনি বিপণিবিতানগুলোর ভয়াবহ অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গুলশানের যতগুলো মার্কেট আছে, সব কটিতেই ভয়াবহ অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তিনি তাঁর এলাকার ৭২ জন কাউন্সিলর ও পুলিশের সমন্বয় করে এ অবস্থা মোকাবিলা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুর সিটিতে ২২ থেকে ২৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। ঈদের দু-তিন আগে থেকে ২৪ ঘণ্টা বাস, ট্রাক দিয়ে তাঁরা যাওয়া-আসা করেন। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ঈদের ছুটিতে যেন তাঁরা আসা-যাওয়া না করেন, এমন ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বলেছি নারায়ণগঞ্জের চিত্র দেখে ভয় লাগছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রচুর মানুষ বসবাস করে। কঠিনভাবে নির্দেশনা না দিলে সামলানো মুশকিল হবে।’ তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন এই শহরের সব মানুষই রাস্তায় ও বিপণিবিতানে।’
বৈঠকে উপস্থিত চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহের মেয়র বলেন, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজারে কোথাও গেলে মনে হয় না লকডাউন আছে। বিপণিবিতানের এ অবস্থা থাকলে ভারতের মতো অবস্থা হবে। ঈদ উপলক্ষে যদি ঢাকা থেকে লোক না আসে, তবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে তাঁরা মতপ্রকাশ করেন। ঈদের পর বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্লাব বা সংগঠনের উদ্বোধন, জন্মদিন, ধর্মীয় সভা-সমাবেশ না করার বিষয়ে তাঁরা মত দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ঈদের সময় চলাচল বন্ধ করতে হলে মালিকদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁদের বলতে হবে কেউ ছুটি পাবে না। না হলে আগের ১৮ দফা মেনেই আমরা সামনে এগোতে পারি।
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংক্রমণের বড় জায়গা বিপণিবিতান। যদি দোকানপাটে কেউ মাস্ক না পরে তাহলে বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। এ ছাড়া আন্তজেলা চলাচল, আন্তশহর চলাচল কোনোভাবেই করা যাবে না। গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবহন খাতকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এবারের ঈদে আমরা যে যেখানে আছি, সেখানেই থাকতে হবে।’
জানতে চাইলে যোগাযোগসচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখার প্রস্তাব এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবহনশ্রমিকদের প্রণোদনার প্রস্তাব করেছি আমি। কারণ, তাঁরা তো ঈদের সময় গাড়ি চালিয়ে আয় করতেন।’