ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় সবাই
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার। এই সাত বছরে পরিবার থেকে শুরু করে নেতা–কর্মীরা হাল ছাড়েননি। ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় আছেন সবাই।
ইলিয়াস আলীর সন্ধানে এবারও প্রতিবাদী কর্মসূচির বদলে জেলাজুড়ে দোয়া মাহফিলসহ তিন দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। আজ জেলা কমিটি সিলেট নগরের হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে আসরের নামাজের পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে। পরদিন বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির ‘গুম’ হওয়া নেতা–কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ২৯ এপ্রিল বিকেলে সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁয় ‘গুমের অপরাজনীতি ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা হবে। সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবাদী কর্মসূচির বদলে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে জননেতা ইলিয়াসসহ গুম হওয়া নেতা–কর্মীদের ফিরে পাওয়ার বিষয়টি আমরা গত বছর থেকে শুরু করেছি। দোয়া মাহফিল জেলাজুড়ে পালিত হবে। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে স্মারকলিপি পেশ, আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে করণীয় নির্ধারণ সবই চলছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে।’
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে সরকারই ‘গুম’ করে রেখেছে। ওই সময় সন্ধানের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় সিলেটের বিশ্বনাথে। হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন।
বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। এ ব্যানারে প্রতি মাসের ১৭ তারিখ ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও দোয়া মাহফিল হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে বিএনপিও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে জোরালো আন্দোলন দানা বাধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে।
আন্দোলনে ইলিয়াস আলীর সঙ্গীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জেলা বিএনপির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম। তাঁর মতে, আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই রকম আন্দোলন অতীতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন গড়তে পারেনি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, এই সাত বছরে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ইলিয়াস আলী আছেন—এ কথায় কোনো পরিবর্তন নেই। দিন দিন বরং বদ্ধমূল হচ্ছে। সবারই এক আশা, ইলিয়াস আলী একদিন ফিরবেনই। তখন বের হয়ে আসবে তাঁর গুম করার রহস্য।
ইলিয়াসের ফেরার আশা শুধু নেতা বা কর্মীদের মধ্যে নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছে আরও দৃঢ়। মা সূর্যবান বিবি (৭৫) বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরারে কেউ লোকাইয়া রাখছে। এক কালবৈশাখ নিছে, আরও এক বৈশাখে আইব!’
ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ গাড়িচালক আনসার আলীর পরিবারেও একই রকম ফেরার আশা। বিশ্বনাথের গমরাগুল গ্রামে আনসারের বাড়িতে আছেন মা, স্ত্রী ও নয় বছর বয়সী আনসারের এক কন্যাসন্তান। আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন, ‘যেখানেই আছেন স্বামী (আনসার আলী), সঙ্গে নিশ্চয় তিনিও (ইলিয়াস আলী) আছেন। তাঁরা জীবিত আছেন, একদিন ঠিকই ফিরবেন।’