ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ২০ কেজি করে চাল পাবেন জেলেরা
আগামী বুধবার (৯ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে দেশের সব নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের পুনর্বাসনে বরিশাল বিভাগের তিন লাখ জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেবে সরকার।
৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার পাশাপাশি সংরক্ষণ, বিপণন, পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আজ রোববার মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ জন্য বিভাগের ছয় জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলা, উপজেলা প্রশাসন সভা করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নিষেধাজ্ঞাকালে তিন লাখের বেশি জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. অলিউর রহমান আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা ২০ কেজি করে চাল সহায়তা পাবেন। বরিশাল বিভাগের প্রায় তিন লাখ জেলে এই সহায়তা পাবেন। জেলা প্রশাসকদের কাছে এ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে যাতে জেলেরা এই সহায়তা পান সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগামী ১ নভেম্বর থেকে আট মাসের জন্য শুরু হবে জাটকা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় যেসব ইলিশ ডিম ছাড়বে, সেগুলো যাতে বড় হওয়ার সুযোগ পায়, সে জন্য ১ নভেম্বর থেকে আট মাসের এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) ধরার ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদিত হয় প্রায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগ থেকে এসেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ ইলিশ। পরিমাণে যা ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন। এবার এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় ইলিশ ডিম ছাড়ে। পরিপক্ব ইলিশ এ সময় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে উপকূলের মিঠাপানির নদ-নদীতে চলে আসে। স্বাচ্ছন্দ্যে ও বাধাহীন পরিবেশে যাতে ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে, এ জন্য সরকার এই সময়ে নদীতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশ সারা বছরই ডিম ছাড়ে। তবে আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। এ জন্য আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পরে ১৮ দিন মিলিয়ে ২২ দিন বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় মৎস্য বিভাগ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
ছয় অভয়াশ্রমে বিশেষ নজরদারি
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা চলার সময়ে উপকূলে সরকার ঘোষিত ছয়টি ইলিশের অভয়াশ্রমে ব্যাপক নজরদারি করবে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এগুলো হচ্ছে ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার।
এ ছাড়া বরিশালের আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাঙনী ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গোপসাগর ও দেশের সব নদ-নদীর পাশাপাশি এই ছয় ইলিশ অভয়াশ্রমে বিশেষ নজরদারি রাখবে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. অলিউর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ ইলিশ ধরার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে দিন-রাত নদ-নদীতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। গভীর সাগরেও নৌবাহিনী এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সক্রিয় থাকবে। এ ছাড়া ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে বিশেষ নজরদারি থাকবে।
অলিউর রহমান বলেন, এ সময় কোস্টগার্ডসহ নদীতীরবর্তী জেলা প্রশাসন নদীগুলো কঠোর মনিটরিং করবে। এ ছাড়া মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন।