ইতিহাস-সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ, শিক্ষা-গবেষণায় পিছিয়ে

প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে পাঁচ দশকে সবকিছুরই পরিধি বেড়েছে। একের পর এক চালু হয়েছে নতুন বিভাগ। তবে পড়াশোনা ও গবেষণার গুণগত মানের উন্নতি হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকেরা।

গবেষণা ও পড়াশোনা নিয়ে হতাশা থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন।
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়-টিলাঘেরা ক্যাম্পাস। চারদিকে চোখজুড়ানো সবুজ বৃক্ষরাজি। এর ফাঁকে ফাঁকে সুবিশাল সব অনুষদ ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা। আছে বিস্তৃত মাঠ, সুদৃশ্য রাস্তা। প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার জন্য রয়েছে শাটল ট্রেন, যা আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামেও জড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। তবে পড়াশোনার মান ও গবেষণায় অগ্রগতি নিয়ে রয়েছে হতাশা।

এ অবস্থায় ৫৬ বছরে পা রাখছে দেশের অন্যতম পাবলিক এ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর মাত্র চারটি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে শিক্ষক ছিলেন মাত্র সাতজন। এখন বিভাগ রয়েছে ৪৮টি, ইনস্টিটিউট ৬টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৫৫০। আর শিক্ষক রয়েছেন ৯০৬ জন।

বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন ২ হাজার ৩০০ একর। প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে পাঁচ দশকে সবকিছুরই পরিধি বেড়েছে। একের পর এক চালু হয়েছে নতুন বিভাগ। তবে পড়াশোনা ও গবেষণার গুণগত মানের উন্নতি হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকেরা।

বিশ্বের কোনো র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নাম আসেনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ পুরোনো। বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে শিক্ষক-সংকটসহ নানা সমস্যা। এখনো পুরোপুরি কাটেনি সেশনজট। আবাসনসংকটও দূর করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এত বছরেও নির্মিত হয়নি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।

নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন, রাজনীতিতে শিক্ষক

গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৪০০ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নিয়োগে দলীয় বিবেচনা, প্রভাবশালী শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ ছিল বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের পাল্লা ভারী করতেই দলীয় লোকজনকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে হলুদ দলের আহ্বায়ক মো. সেকান্দর চৌধুরীর দাবি, নীতিমালা মেনেই যোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হলুদ দলের প্রভাব এখন আরও বেশি। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে কিছু শিক্ষক বের হয়ে গেছেন। তাঁরা আলাদা সংগঠন তৈরি করেছেন। গত দুটি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশই নেননি বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরা।

দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা হচ্ছে না বলে মনে করছেন সাবেক শিক্ষকেরা। অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—দুই পক্ষকেই দলীয় রাজনীতিতে নিয়োজিত করা হয়েছে। এখান থেকে উত্তরণ না ঘটলে শিক্ষার মান ও গবেষণার মানের উন্নতি হবে না। দলীয় রাজনীতিতে কিছু শিক্ষক সময় ব্যয় করছেন। তাঁরা গবেষণা ও পড়াশোনা করছেন না।

গবেষণায় পিছিয়ে, পাঠদান নিয়ে ‘অসন্তুষ্টি’

গবেষণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান। নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী শনাক্তকরণ, নতুন ব্যাঙের সন্ধান, সাগরের তলদেশে একাধিক নতুন যৌগ আবিষ্কার, মাছের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নুরুল ইসলামের একটি গবেষণাপত্র পাঁচ শতাধিকবার উদ্ধৃত হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ রকম কিছু সাফল্য থাকলেও গবেষণায় এখনো পিছিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রকাশক সংস্থা স্কুপাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশে গবেষণাপত্র প্রকাশনার র‌্যাঙ্কিংয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান যথাক্রমে ৭, ৯ ও ১০। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে আছে ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

নিয়মিত গবেষণা অনুদান, বিশেষ অনুদান, এমফিল ও পিএইচডি খাতে ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২১ কোটি টাকা। তবে এর বাইরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি বাবদ আরও অন্তত ৯ কোটি টাকা রয়েছে বলে হিসাব নিয়ামক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান পরিবর্তন করা যাবে না। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সব গবেষককে দিতে হবে। এ ছাড়া গবেষণাকে মানুষের কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও গবেষকদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

পাঠদান নিয়েও সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, নিয়মিত পাঠদান হয় না।

ছাত্ররাজনীতি ও ১৫ খুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি বরাবরই ক্ষমতাসীনদের কবজায়। যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, সে দলের অনুসারী ছাত্রসংগঠনই বিশ্ববিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়ায়। তবে আশির দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। ২০১২ সাল পর্যন্ত তাদের দাপট অটুট ছিল। বর্তমানে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি ছাত্রসংগঠন সক্রিয়। সবশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।

বর্তমানে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, মারামারির কারণে নানা সময়ে ক্যাম্পাস অচল হয়েছে। এ ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি দুটি পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সমর্থকেরা, অপর পক্ষে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। এই দুই পক্ষের মধ্যে রয়েছে আবার ১১টি উপপক্ষ। এসব উপপক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ফেসবুকে ভিন্নমত প্রকাশ করায় ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল—এ ২০ বছরে ক্যাম্পাসে খুন হন ১৫ জন। এর একটি ঘটনারও বিচার শেষ হয়নি। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র তাপস সরকার। তাঁর ভাই শ্রাবণ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত বছর আগে ভাই খুন হয়েছে। এখনো বিচারকাজ শেষ হয়নি। আমরা চাই তদন্ত সাপেক্ষে খুনিরা শাস্তির মুখোমুখি হোক।’

কাটেনি আবাসনসংকট

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক মো. ফরিদুল আলম চৌধুরী জানান, ২০০১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবকাঠামো, উন্নয়ন, মেরামত, সংস্কার ও যানবাহন বাবদ প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। অবকাঠামোকাজের কিছু অংশ এখনো চলমান। তবে অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের পরও সব শিক্ষার্থীর আবাসনসুবিধা নিশ্চিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে হল রয়েছে ১৪টি। এসব হলে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। বাকি শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন মেসে ও আশপাশের কটেজে থাকেন। হোস্টেল রয়েছে একটি।

চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে হলের আসন বরাদ্দ কার্যক্রম। ছাত্রলীগের পক্ষ-উপপক্ষগুলোর নেতা-কর্মীরাই দখল করে রাখছেন বেশির ভাগ আসন। হলের নিয়ন্ত্রণও কর্তৃপক্ষের হাতে নেই বলে অভিযোগ আছে।

অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদ প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যোগ্যতা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে হলের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মেসে-কটেজে ভাড়া থাকছেন। আবার হলের আসন পাওয়ার জন্য রাজনীতিতে জড়াতে বাধ্য করা হয় শিক্ষার্থীদের।

বিদেশি শিক্ষার্থী নেই ২০ বছর

সবশেষ ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে একজন নেপালি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর আর কেউ ভর্তি হননি। তবে এর আগে ১৯৯০-৯১ থেকে ১৯৯৮-১৯৯৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক কোর্সে মোট ১৫ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। আবার ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন আরও চারজন। এই ১৯ শিক্ষার্থীর সবাই নেপালের। আর সবাই ভর্তি হয়েছিলেন বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে। জানা গেছে, পরে নেপালের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ চালু হয়। তাই দেশটি থেকে আর কেউ এখানে পড়তে আসেননি।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, আলোকিত শিক্ষকেরা

শিক্ষা-গবেষণায় উজ্জ্বল ইতিহাস না থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে একজন শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হয়েছেন। বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেওয়া হয়েছে।

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় আলোড়িত হয় আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের দ্বারা। তার অব্যবহিত পূর্বে অসহযোগ আন্দোলনে উপাচার্য থেকে সামান্য কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা অকুণ্ঠচিত্তে যোগ দিয়েছিলাম।’

দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এখানে শিক্ষকতা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে চারুকলা বিভাগ থেকে পাঁচজন, বাংলা বিভাগের চারজন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের একজন, ইতিহাস বিভাগ থেকে একজন ও অর্থনীতি থেকে একজন।

সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশা

গবেষণা ও পড়াশোনা নিয়ে হতাশা থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন। দেশ-বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বর্তমানে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মু. সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণা ও পড়াশোনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনো গড়পড়তা। শুরু থেকেই এদিকে নজর ছিল কম। গবেষক বা শিক্ষকেরা সামগ্রিকভাবে মানবজাতির কাজে লাগে, এমন কাজ খুব কম করেছেন। আসলে শিক্ষকদের গবেষণামুখী করা যায়নি। আগে ক্যাম্পাসে নোবেলজয়ীদের নিয়ে সভা-সেমিনার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছেন। কিন্তু এখন আর সেই সভা-সেমিনার হচ্ছে না।

শুধু অবকাঠামোগত মহাপরিকল্পনা দিয়ে কাজ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনামুখী করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে। সর্বোপরি আগামী ১০০ বছরের জন্য গবেষণা ও পড়াশোনার বিষয়ে মহাপরিকল্পনা করতে হবে।

ভালো করার অনেক জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। শিক্ষকদের গবেষণা ন্যাচার, স্প্রিংগারসহ ভালো মানের আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থায় প্রকাশিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে গবেষণার মান খারাপ, আবার কিছু ক্ষেত্রে ভালো। তবে শিক্ষার মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।