২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আমার প্রথম মৃত্যু

দুর্ঘটনার পর দেশে ফিরে আবার ক্যামেরা হাতে লেখক
দুর্ঘটনার পর দেশে ফিরে আবার ক্যামেরা হাতে লেখক

আমি বেঁচে আছি—এটাই বড় বিস্ময়। যে দুর্ঘটনায় আমি পড়েছিলাম, তা থেকে বেঁচে আসা, এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। দীর্ঘ ঘুমের পর মানুষ যেমন জেগে ওঠে, তেমনি আমি জেগে উঠেছিলাম অনেকগুলো দিন পার করে। অনেকেই আশঙ্কায় ছিলেন, আমাকে হয়তো বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সবার ভালোবাসায় আমি আবার ফিরে এসেছি।

এখন সেলফি অথবা গ্রুপ ছবি তোলার সময় আমার অনেক অস্বস্তি হয়, মুখে কাটা দাগ দেখা যায় কি না। মাথার কাটা দেখা গেল কি না! পা ভাঙা বোঝা যায় কি না! আরও কত কী। আবার পরমুহূর্তেই মনে পড়ে, ছবি তোলাই তো জীবনে আর হতো না, বেঁচে না থাকলে...

হ্যাঁ, চলতি বছরের শুরুতে, ৯ জানুয়ারি রাত প্রায় ১১টার দিকে অফিসের কাজ সেরে বের হয়েছি, মনে আছে, অফিস থেকে বের হওয়ার সময় পার্কিংয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কী বিষয়ে যেন কথা সেরে বের হলাম। এরপর কী হয়েছে, আর বলতে পারব না।

যখন জ্ঞান ফিরল, মনে হলো লম্বা ঘুম শেষে কোথায় যেন শুয়ে আছি। ভাইয়া আশাকে (আমার স্ত্রী) যেন কী বলছেন। ডাক্তার আছেন সেখানে। আরও অনেকে। সবাই কী কী যেন বলছেন...

আপনাদের অনেকের জানা, বড় একটা দুর্ঘটনার পর আমি কোমায় (প্রায় মৃত মানুষ হয়ে) পড়ে ছিলাম। ২৩ দিন আমি আসলে কোথায় ছিলাম, কেমন ছিলাম, জানি না। সে এক দীর্ঘ ঘুম!

তারপর আস্তে আস্তে ফিরেছি, এখন ভালোর দিকে।

এলাকার মানুষ, আমার বন্ধুবান্ধব ও অফিস সহকর্মীদের কাছে পরে শুনেছি, অফিস শেষ করে, মোটরসাইকেল থামিয়ে, রাস্তার পাশে থাকা অন্য একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, এমন সময় একটি গাড়ি সজোরে আমাকে ধাক্কা দেয়। রাস্তায় পড়ে যাই আমি। কাকতালীয়ভাবে রাস্তায় থাকা আমার পরিচিত সাংবাদিক, বন্ধু ও পথচারীরা আমাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মী ও পরিচিত সবাই গভীর রাতেই আসতে থাকেন!

শুনেছি ঢাকা মেডিকেলে প্রথম অবস্থায় কোনো বেড ফাঁকা পাওয়া যায়নি। এ সময় একজন মারা গেলে একটি বেড ফাঁকা হয়। আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকলে প্রথম আলোর সবাই ও আমার পরিবারের সবাই, বাংলাদেশের সব বড় বড় ডাক্তারের পরামর্শে, সাংবাদিক বন্ধুদের সহযোগিতায় নেওয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। দুই দিন সেখানে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুরের গ্লেনইগলস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেটা ছিল আমার প্রথম মৃত্যু। অবিশ্বাস্যভাবে আমি জীবন ফিরে পাই। দীর্ঘ প্রায় ২ মাস মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরে আসি ঢাকায়।

দুর্ঘটনার আগে আমার সারা দিন–রাত ব্যস্ততার জন্য ৬ বছর ও ৪ বছর বয়সী দুই ছেলের সংস্পর্শ খুব বেশি পাইনি। এখন পাশে থাকায় ওরা আমার কাছে নানা আবদার করে, খুব আনন্দ হয়।

একবার স্ত্রী গল্পের ছলে বলছিল, ‘আমি জানি, একজন বিধবার কী কষ্ট...’। যদিও তার সবাই আছে, সবই আছে, কিন্তু স্বামী না থাকা, সন্তানদের বাবা না থাকা, বাবা–মার সন্তান না থাকা, কিংবা ভাই না থাকা যে কত কষ্টের তা যার না থাকে সে–ই কেবল বোঝে।

আমি এখন ভালো আছি, আবার কাজ শুরু করেছি। তবে একটা প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করে। আমার জন্য এত মানুষের দোয়া-আশীর্বাদ কীভাবে পেলাম? আমার অফিস, আমার সম্পাদক, পত্রিকার চেয়ারম্যান, তাঁর পরিবার, সবার এত ভালোবাসা কীভাবে পেলাম? কারও জন্য কোনো সাহায্য–সহযোগিতা কখনো করতে পেরেছি, এমন তো মনে পড়ে না!