আমরা দ্বিগুণ ভাত খাই, এটা কমাতে পারলেই সমাধান: কৃষিমন্ত্রী
দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভাত খাওয়া কমানোকে একটি উপায় হিসেবে দেখছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
আজ রোববার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রতি প্রায় ২০০ গ্রাম চাল খেয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে চাল খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৪০০ গ্রাম। এটা কমিয়ে আনতে পারলে আমাদের যে চালের উৎপাদন, সেটাকে টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারি সত্ত্বেও এ দেশের মানুষ না খেয়ে নেই। এ সময়ে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের জোগান দেওয়া এবং কৃষির আধুনিকায়ন করা।
কৃষিপণ্য রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বড় আয় করে। সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।’
একই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে কৃষি উৎপাদনের পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যানে ঝামেলা আছে। গত বছর বলা হলো, দেশে ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। আমাদের চাহিদার কথা বলা হয়, ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এ হিসাবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন আলু বাড়তি থাকার কথা। সে সময়ে রপ্তানি বন্ধ ছিল। তারপরও আমাদের ঝামেলা হয়েছিল। তখন আমরা বুঝতে পারিনি প্রকৃতপক্ষে আমাদের উৎপাদন কম হয়েছে না চাহিদা বেশি ছিল। এ হিসাবটা আমাদের সঠিকভাবে আসেনি।’
এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষিতে বৈচিত্র্যায়ণ হয়েছে, বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু এ কথা ঠিক এখনো আমরা আমাদের সমমানের দেশগুলো যেমন ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশের তুলনায় একরপ্রতি খাদ্য উৎপাদনে অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা যখন হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৪৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করছি সেখানে একই পরিমাণ জমিতে ভিয়েতনাম ৫ দশমিক ৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করছে। অর্থাৎ আমরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক পিছিয়ে আছি। যেটা পেঁয়াজ–রসুনের আকার দেখলেই বোঝা যায়।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে কোনা কিছুর দাম বাড়লেই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা বলা হয়। কিন্তু এটা ঠিক না। কারণ, বাজারে কোনো কিছুর দাম বাড়লে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এটার সরবরাহ কম। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেওয়া ঠিক না।
বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) ও দৈনিক বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর: কৃষির রূপান্তর ও অর্জন’ শীর্ষক কৃষি সম্মেলনে এসব কথা বলেন কৃষি ও বাণিজ্যমন্ত্রী। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী এ কৃষি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশ-এর মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডেভিস স্টিভেন্স এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএও–এর আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
প্রথম অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসিআই এগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এফ এইচ আনসারী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ, মাল্টি মোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান।