আবহাওয়ার পূর্বাভাসব্যবস্থা
আমরা কবে বুঝব কৃষির ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি
নিম্নচাপ প্রবল হোক বা দুর্বল হোক, সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে সক্ষম হোক বা না হোক, বৃষ্টি নামাবেই। কিন্তু সেই পূর্বাভাস কৃষকের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায় না।
বঙ্গোপসাগরে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল, যা পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর নাম দেওয়া হয় জাওয়াদ। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানেনি। পূর্বাভাসমতো সেটি ৮ ডিসেম্বর ভারতের পূর্ব উপকূলে গিয়ে দুর্বল হয়ে যায়।
ভারতের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের অধীন (আগে ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন) আবহাওয়া দপ্তর প্রথম থেকেই নিম্নচাপটির ওপর নজর রাখছিল। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও শুরু থেকেই ওয়াকিবহাল ছিল। গত ২৭ নভেম্বর থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল জাওয়াদের ঠিকানা কোথায় হবে। তখন থেকেই প্রতিবেশী দেশের আবহাওয়া দপ্তর আর আবহাওয়াবিদেরা জাওয়াদের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে হিসাব–নিকাশ শুরু করেন।
নিম্নচাপ প্রবল হোক বা দুর্বল হোক, সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে সক্ষম হোক বা না হোক, বৃষ্টি নামাবেই। আর মাসটা যখন অগ্রহায়ণ (১৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর অগ্রহায়ণ) তখন কৃষির ক্ষতি অনিবার্য। খনার বচনের কথা ভুলে গেলে চলবে কী করে! খনা তাঁর সতর্কপর্বের বচনগুলোর মধ্যে বলে গেছেন ‘যদি বর্ষে আগনে-রাজা যায় মাগনে’। যার সোজাসাপটা মানে হচ্ছে অগ্রহায়ণে যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে মহাসর্বনাশ। খোদ রাজাকেও চাইতে (মাঙ্গতে) হবে খাদ্যসাহায্য। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের আসরে দেশকে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ পার করতে হলো আষাঢ়-শ্রাবণের মতো বৃষ্টি অঝোরধারায়।
দেশে পূর্বাভাসের ধরন
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদকে কেন্দ্র করে দেওয়া আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস-সতর্কীকরণ প্রায় সবই ছিল জাহাজ আর বন্দরভিত্তিক। একপর্যায়ে বলা হয়েছিল, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।’
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত মানে হলো বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। সতর্কসংকেত দেওয়ার পাশাপাশি কোন বিভাগে কেমন বৃষ্টিপাত হতে পারে, তারও একটা পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু কোন জেলা বা কোন উপজেলায় কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে, সেটা আলাদাভাবে ছিল না।
তাহলে মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদের কাছে এ পূর্বাভাস কি কোনো বার্তা দেয়? এ পূর্বাভাস মাগুরা, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, নোয়াখালীসহ দেশের কৃষকদের কি সতর্ক করে? কক্সবাজার থেকে মোংলা পর্যন্ত জাহাজি আর বন্দরের জন্য অ্যালান করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেতে কৃষকের কী করণীয়? মাঠে থাকা ফসলের ওপর কি আসর ফেলতে পারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত? যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতজনিত কৃষির ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকে।
অবশ্য এমন পরামর্শ কৃষকের কাছে কতটা পৌঁছায়, কতটা তাঁদের কাজে লাগে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। আমরা সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকে জানতে পারি, ‘জাওয়াদের প্রভাবে নোয়াখালীতে ২৩ হাজার হেক্টর ফসল নষ্ট’, ‘১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত’, ‘কৃষকের স্বপ্নে হানা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ’, ‘বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ফের মাথায় হাত পড়ল খুলনার কৃষকদের’, ‘কৃষকের সর্বনাশ, কাটা ধান ভাসছে পানিতে’, ‘আলুচাষি এখন বিপদে, ভেসে গেছে ঘের-পুকুরের মাছ শুঁটকিমহাল’ ইত্যাদি।
পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে সতর্ক করেছে কৃষকদের
বাংলাদেশঘেঁষা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জেলাওয়ারি সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আর ঝোড়ো হাওয়ার বেগ নিয়ে চর্চা করছে। সেই চর্চার ওপর ভিত্তি করে কোথাও হলুদ, কোথাও কমলা, আবার কোনোখানে লাল সতর্কবার্তা জারি করেছে। আমরা যখন ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেতের ঘোষণা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছি, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বলা হচ্ছিল ‘যাঁরা এখনো ধান ঘরে তোলেননি, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব ধান ঘরে তুলে নিন। আলুচাষিরা দিন কয়েক অপেক্ষা করে আলুর বীজ জমিতে ফেলুন। আর শর্ষে যেসব জমিতে আছে, ওই জমিতে নালা তৈরি করুন, যাতে জমিতে অতিরিক্ত জল জমে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে।’
রাজশাহী-মাগুরার মতো কাঁটাতারের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় তখন আমন ধান কাটার কাজ চলছিল। কেউ কেউ ধান কেটে এনে মাড়াই-ঝাড়াই করছিলেন। বৃষ্টির কারণে পাকা ধান জমিতে ঝরে যেতে পারে। সমস্যায় পড়তে হতে পারে কৃষকদের। এ ছাড়া বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এসব বিবেচনা করে পশ্চিমবঙ্গ তাদের সতর্কবার্তা সাজিয়েছিল। ওই রাজ্যের হরিশ্চন্দ্রপুরের জেলা কৃষি দপ্তরের তরফে একইভাবে চাষিদের সতর্ক করা হয়। মাইকে প্রচার করা হয়, যাঁদের জমিতে পাকা ধান আছে, তাঁরা যেন এক দিনের মধ্যে ধান কেটে নেন। আলুর বীজ যাঁরা রোপণ করেননি, তাঁরা যেন ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
পশ্চিমবঙ্গে এসব সতর্কবার্তা প্রচারের কারণে প্রায় সব জায়গায় কৃষকেরা যুদ্ধকালীন তৎপরতার মতো পাকা ধান তোলার কাজ শুরু করেন। ডিসেম্বরের ৪ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে হলুদ আর কমলা সতর্কের আওতাধীন প্রায় সব অঞ্চলের ধান ঘরে উঠে যায়।
বাংলাদেশে কী ঘটল
বাংলাদেশে ঘটে উল্টো ঘটনা; চাষির ‘পাকা ধানে মই’ দিয়ে যায় জাওয়াদের বৃষ্টি। মাঠে কেটে রাখা ধান ভেসে যায় বৃষ্টিতে। ধানের খড় পচে যায় পানিতে।
না শুকালে গাছ থেকে ধান ঝরানো মুশকিল। তাই ধান কেটে দুই–এক দিন মাঠেই ফেলে রাখেন চাষিরা। তাতে খড়টাও শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য হয়ে ওঠে। যশোর, মাগুরা ও ঝিনাইদহের মাঠে কেটে রাখা ধান ও খড় নষ্ট হয়েছে কেবল তথ্যের অভাবে। সামান্য মেঘ-বৃষ্টির বদলে অঝোরধারার বৃষ্টি নামবে, এটা চাষিদের কল্পনায়ও ছিল না। একটু আভাস পেলেই তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের চেয়েও তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে আনতে পারতেন।
ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাল, ৫ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় যশোরে, ১৬৩ মিলিমিটার। যদিও এ মাসে এ জেলায় স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার। একই সময়ে ঢাকায় ১৩২ (স্বাভাবিক মাসিক গড় ১২ দশমিক ৮) ও ফরিদপুরে ১৫২ (স্বাভাবিক মাসিক গড় ১১ দশমিক ৩) মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি বেশি হয়েছে অন্যান্য জেলায়ও। ওই সময় চট্টগ্রামে ৮১, কুমিল্লায় ১০৩, মাদারীপুরে ৯০, চাঁদপুরে ৭০, শ্রীমঙ্গলে ৫৪, খুলনায় ৪৯, সাতক্ষীরায় ৭৩, বরিশালে ৪২, পটুয়াখালীতে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা, মাঝারি, ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
কৃষকেরা টের পাননি এ অস্বাভাবিক বৃষ্টির অবধারিত আগমনের কথা। কিন্তু যাঁদের কাছে যন্ত্রপাতি ছিল, তাঁরা টের পেয়েছিলেন নিশ্চয়। এটা গাফিলতি, না সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা অথবা নিতান্তই উদাসীনতা। নাকি একে আমরা নিষ্ঠুরতা বলব?
ক্ষতি ‘সামান্য’ নয়
দেশে আমরা দুর্যোগের ব্যাপকতা আর গভীরতা মাপি প্রাণহানি দিয়ে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে প্রাসাদে ফেরার পর রাজার প্রশ্নের উত্তরে রানি যেমন বলেছিলেন ‘গৃহ কহ তারে কী বোধে! /গেছে গুটিকত জীর্ণ কুটির,/ কতটুকু ক্ষতি হয়েছে প্রাণীর?/ কত ধন যায় রাজমহিষীর/ এক প্রহরের প্রমোদে!’ (সামান্য ক্ষতি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
মাঠে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বললে জানা যাবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। জানা গেছে, এ বছর এক বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করতে এলাকাভেদে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সেখানে পানি কাদায় মিশে যাওয়া ধান উদ্ধার করতে শ্রমিক খরচ বাবদ আরও প্রায় তিন হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হবে। তা ছাড়া গোখাদ্য বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের বিচালি বা খড় পচে যাওয়ায় ক্ষতি আরও বেড়েছে।
তাই বলা যায়, শুধু মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নয়, গবাদি প্রাণীর খাদ্যনিরাপত্তাও বড় ঝুঁকিতে ঝুলবে। ঝিনাইদহের এক কৃষক জানিয়েছেন, সাধারণত এক বিঘা (৪৬ শতক হিসেবে) জমিতে গড়ে ৩০ মণ ধান ফলে। বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮ থেকে ১০ মণের মতো ধান ঝরে যাবে। খড়ও পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরিণাডাঙ্গা গ্রামের কৃষকদের কথা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বছর আশা করে কেউ এক বিঘা, কেউ দেড় বিঘা আবার কেউ তাঁর বেশি জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। সব ধান মাঠে পড়ে রয়েছে। অল্প কিছু ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন তাঁরা। এ বছর সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতে পারে। অসময়ের বৃষ্টিতে তাঁদের সর্বনাশ হয়ে গেল।
অগ্রহায়ণে সর্বনাশ কি নতুন কিছু
আমরা প্রকৃতির খেয়ালি কর্মকাণ্ডের সবকিছুকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝাঁপিতে ফেলে দেওয়ার তালে থাকি। অগ্রহায়ণের ঝড়–বৃষ্টি যে একেবারেই নতুন কিছু নয়, তার প্রমাণ এ–সম্পর্কিত খনার বচন আর তার তাৎপর্য বিশ্লেষণ। একসময় কৃষি পাঠক্রমে যুক্ত ছিলেন খনা। এখনো বোধ হয় আছে, তবে চর্চায় যে অনুপস্থিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত মানে হলো বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। তাহলে মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদের কাছে এ পূর্বাভাস কি কোনো বার্তা দেয়? এ পূর্বাভাস মাগুরা, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, নোয়াখালীসহ দেশের কৃষকদের কি সতর্ক করে? কক্সবাজার থেকে মোংলা পর্যন্ত জাহাজি আর বন্দরের জন্য অ্যালান করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেতে কৃষকের কী করণীয়? মাঠে থাকা ফসলের ওপর কি আসর ফেলতে পারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত? যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতজনিত কৃষির ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকে।
শুধু বর্ষণ নয়, স্মরণকালের মধ্যে অগ্রহায়ণে বড়সড় ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস আছে। ১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বর এমনই এক ঘূর্ণিঝড়ে (ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ০৪ বি) প্রাণ যায় ৬ হাজার ২৪৬ জনের (বাংলাদেশে ৫ হাজার ৭০৮, পশ্চিমবঙ্গে ৫৩৮ জন)। তার আগে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে (অগ্রহায়ণে) আরেক ঘূর্ণিঝড়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। এপার ও ওপার মিলিয়ে সেবার ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এ অবহেলার দায় কার
কৃষি নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করছেন, নানা ব্যক্তিগত উদ্যোগের বিজ্ঞাপনে কৃষকের হাসি যাঁদের মার্কা, কৃষির উন্নতি নিয়ে নিমগ্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণের লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, বিশেষায়িত ব্যাংক—কেউ কি কৃষকের এ আসন্ন সর্বনাশ টের পায়নি? এ অবহেলা-উদাসীনতার দায়দায়িত্ব তাঁরা এড়াবেন কোন যুক্তিতে, কোন অজুহাতে? কবে আমরা বুঝব কৃষির ক্ষতি, কৃষকের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি।
পরের ঝড় আসার আগেই আমাদের কৃষিবান্ধব পূর্বাভাস আর সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আবহাওয়া দপ্তরের চুনসুরকি সংস্কারের পাশাপাশি সক্ষমতা প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্দরের সঙ্গে সঙ্গে জনপদ আর কৃষি নিয়েও তাদের চিন্তিত হতে হবে।
যাঁদের ধান ও আনাজ গেল, তাঁদের একটা দিশা দিতে হবে, যাতে আসন্ন রবি মৌসুমে মাঠে থাকার তাকত তাঁর থাকে। ভূমিহীনদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে কৃষি, তাঁদের তালিকা কোনো দপ্তরে নেই। তাঁদের কাছে প্রণোদনা পৌঁছানোর কৌশল খুঁজতে হবে।
● গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক