আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সোনা জয়
১৩ জুলাই ২০১৮ সাল। রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) পুরস্কারের মঞ্চে দেশের জন্য প্রথম সোনার পদক গ্রহণ করে আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। ১০০টির বেশি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।
এর প্রায় ১০ বছর আগে প্রথম আলোর সে সময়কার সাপ্তাহিক আয়োজন ‘বিজ্ঞান প্রজন্মে’ শুরু হয় ‘নিউরনে অনুরণন’ নামের গণিত অলিম্পিয়াড। ২০০৩ সালে প্রথম আলোর পৃষ্ঠপোষকতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথমবারের মতো জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড। ২০০৪ সালে এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষক হয় ডাচ্–বাংলা ব্যাংক। আর ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে আইএমওতে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশব্যাপী এ আয়োজনের সফল ব্যবস্থাপনা করছে প্রথম আলো।
২০১১ সালে ১১ বছর বয়সী আহমেদ জাওয়াদ জীবনে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েই প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে হয়ে গেল ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস’। এরপর সুযোগ পেয়ে গেল গণিত ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার। এর মাধ্যমে শিশু জাওয়াদের জীবনের মোড় ঘুরে গেল। সে দেখতে পেল, পাঠ্যবইয়ের বাইরে আছে এক আশ্চর্য জগৎ। গণিতের জগৎ।
গণিত ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে সে এখন বলে, ‘গণিত ক্যাম্প থেকে শিখতে পেরেছি, একটা সমস্যা নিজে থেকে কীভাবে সমাধান করা যায়। কীভাবে সমস্যার গভীরে যেতে হয়। সমাধান করতে না পারলে অন্যের কাছ থেকে সমাধান শিখে নেওয়ার চেয়ে দিনের পর দিন ওই সমস্যার পেছনে লেগে থাকা বেশি আনন্দের।’
২০১৬ সালে আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক, ২০১৭তে রুপার পদক হয়ে ২০১৮তে সোনার পদক। জাওয়াদ বলে, তার গণিতের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব সাফল্যের পেছনে গণিত অলিম্পিয়াড ও গণিত ক্যাম্পের ভূমিকা বিরাট। বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড উৎসবের সূচনা ঘটায় প্রথম আলো। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের অনুরোধে প্রথম আলো সম্পাদক এর সূচনা করেন ২০০৪ সালের জুন মাসে।
২০১১ সালে প্রথম পাওয়া পুরস্কারের মেডেলের সঙ্গে জাওয়াদ পেয়েছিল একটা ইন্টারনেট মডেম। এ কথা স্মরণ করে সে বলে, ‘সেই মডেমের মাধ্যমে আমার ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয়। এরপর ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।’ আর আছে মা সৈয়দা ফারজানা খানম ও বাবা আহমেদ আবু জোনায়েদ চৌধুরীর উৎসাহ-অনুপ্রেরণা।
জাওয়াদ বলে, ‘আমি তিনবার তিনটি নতুন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি, অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে, বিখ্যাত গণিতবিদদের দেখেছি, শুনেছি তাঁদের কথা।’
আর সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এখন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমআইটিতে অধ্যয়ন করছে আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী।
ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় শুরু থেকে বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের প্রাণের মেলা ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের অংশ হতে পেরে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক আনন্দিত ও গর্বিত। এর মাধ্যমে আমাদের তরুণদের মেধা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণিত ও ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের পাশাপাশি এই মেধাবী তরুণেরা এখন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলিকন ভ্যালিতেও নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে। দেশে গণিত শিক্ষারও একটি গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে গণিত কমিটির নেতৃত্ব, আমাদের সহযোগিতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায়।
মুনির হাসান: প্রধান, যুব কার্যক্রম অ্যান্ড ইভেন্টস, প্রথম আলো