আটটি বিদ্যালয় ভবনের দাম এক লাখ ৭১ হাজার টাকা!

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় কক্ষবিশিষ্ট ৮০ ফুট দীর্ঘ আধাপাকা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রকৌশল বিভাগ এর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয় এক লাখ চার হাজার টাকা। এর পরও ওই ভবনটিসহ আরও সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র এক লাখ ৭১ হাজার ৮০৮ টাকায়। ভবনগুলো কিনেছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মহিদুর রহমান।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় উপজেলার তালুক হাপানিয়া, টেপরী, রৌহা, উলাইল, সমেতপুর, তালুকনগর, বিনোদপুর ও দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাতটি পাকা ও আধাপাকা ভবন নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ গত জানুয়ারিতে বিদ্যালয়গুলোর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সাত লাখ ৮৫ হাজার টাকা। গত আগস্টে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী ড্রাগ অ্যান্ড পেপার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. মহিদুর রহমান এক লাখ ৭১ হাজার ৮০৮ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গণ্য হন। সন্তোষজনক দর না পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে মানিকগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দুটি পত্রিকায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবারও মোহাম্মদ আলী ড্রাগ অ্যান্ড পেপার হাউস এক লাখ ৭১ হাজার ৭৫২ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। এরপর নিলাম কমিটি আগের দরে মোহাম্মদ আলী ড্রাগ অ্যান্ড পেপার হাউসের কাছে বিদ্যালয়গুলোর ভবন বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ আলী ড্রাগ অ্যান্ড পেপার হাউসের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মহিদুর রহমান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আগ্রহী ঠিকাদারদের নিলামে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সব ঠিকাদার নিলামে অংশ নিলে বিদ্যালয়গুলোর ভবন আরও অনেক বেশি দামে বিক্রি হতো। তবে মহিদুর রহমান অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তিনি সর্বোচ্চ দর দিয়ে বিদ্যালয়গুলোর ভবন কিনেছেন।দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, পরিত্যক্ত ভবনটি ছিল অন্তত ৮০ ফুট লম্বা। চালের টিন ছিল প্রায় নয় বান্ডেল। বাজারদর অনুযায়ী ভবনটি অন্তত দুই লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব ছিল। তাঁর অভিযোগ, ভবনটি বিক্রির আগে তাঁদের জানানো হয়নি। টেপরী এলাকার বাসিন্দা আজাহার আলীর অভিযোগ, টেপরী বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনটি ছিল পাকা। রড ও ইটসহ ওই ভবনটি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা যেত। বিনোদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, নিলামে বিক্রি করে দেওয়া পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবনে বিপুল পরিমাণ টিন ছিল, যা এত কম মূল্যে বিক্রি হওয়ার কথা নয়।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিলাম বিক্রয় কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, নিলাম প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম করা হয়নি। রাজনৈতিক কোনো চাপও ছিল না।