১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ শতভাগ সত্য ছিল বলে জানিয়েছেন ওই মামলার অন্যতম আসামি ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ৩৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও মিত্র দেশ এবং ব্যক্তিদের অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গতকাল রোববার ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও মিত্রদের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্কালীন পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক জগজিত্ সিং অরোরা ও বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর প্রধান শ্যাম মানেকশর নামে রাজধানীর তিনটি সড়কের নামকরণের দাবি জানান।
রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এমনকি পাকিস্তানের নাগরিক সমাজের যে সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের দেশে এনে সংবর্ধনা ও সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবিও করেন শাহরিয়ার কবির।
সভাপতির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এই প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, ‘ইতিহাসের স্বার্থেই এসব করা দরকার, যাতে নতুন প্রজন্ম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে।
আমাদের দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। ইতিহাসের স্বার্থে ভারত ও অন্য মিত্রদের অবদানকে আমরা স্মরণ করব।
’অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত যেভাবে সাহায্য করেছিল, তেমনি দূরের শক্তি রাশিয়াও বিরাট অবদান রেখেছে।
জাতিসংঘে রাশিয়া সে সময় তিনটি প্রস্তাবে ভেটো না দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বানচাল হয়ে যেত।’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কথা উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী বলেন, ‘আমরা তখন রাজনৈতিক কারণে অনেক কথাই বলেছি। তবে পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিল, তা শতভাগ ঠিক ছিল।
আমাদের পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৮ সালে আমরা ধরা পড়ি।
পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাঙালি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের সবগুলো সেনানিবাস দখল করে পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্ত্র কেড়ে নেবে।
এরপর মুজিব ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) নেতৃত্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করব।
’মুক্তিযুদ্ধে এস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘৬ তারিখে যখন আমরা সিলেট মহাসড়কে, তখন শুনতে পাই যে ভারত আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
সেদিন আমাদের মনোবল অনেক বেড়ে গিয়েছিল।’হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে, আমরা তাঁদের অবশ্যই ভুলে যাব না।
না হলে আমরা বিশ্বে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিচিত হব।’বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘একাত্তরে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
মনে আছে, খুব উত্তেজিত ছিলাম। তখনই আমরা জয় বাংলার ডাক শুনতে পাই। আমরাও জয় বাংলা বলে মিছিল করতাম।
বিজয়ের পর যেদিন বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে এলেন, তখন সে কী বিশাল মিছিল হলো। সেই দিনগুলোতে থাকতে পেরে আমি গর্ব বোধ করি।
তখন আমাদের কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। এক টাকা, দুই টাকা তুলে বাংলাদেশের তহবিলে দিতাম আমরা।’শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ৬ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।