আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ আটকে আছে জমির ফাঁদে
ভারতের জমি অধিগ্রহণের আইনি জটিলতায় আটকে গেছে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের কাজ। গত বছরের জুলাইয়ে ত্রিপুরায় আন্তসীমান্ত রেলপথ প্রকল্পটি উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও রেলপথ স্থাপনের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। আইন অনুযায়ী কারও কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের পর আপত্তি জানানোর জন্য তিন মাসের সময় পাবেন জমির মালিক।
বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে আগরতলা রেলসংযোগের জন্য ১৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার বাংলাদেশে আর সাড়ে ৫ কিলোমিটার ভারতে। ভারতীয় অংশের রেলপথের মধ্যে ৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার হবে উড়াল রেলপথ। গত শুক্রবার সাংবাদিকদের জমি অধিগ্রহণ অধিকর্তা পি কে দেব জানান, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। তবে আইনি জটিলতার কারণে আরও আড়াই মাস রেলকে অপেক্ষা করতে হবে কাজ শুরুর জন্য।
তিন দিক থেকে বাংলাদেশ বেষ্টিত ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০১০-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বৈঠকের পর আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী রেলপথ স্থাপনের পুরো খরচ মেটাবে ভারত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৭২ কোটি রুপি।
ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু নিয়ম মেনে আপত্তি আসে কি না তার জন্য নতুন জমি আইনে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই ভারতীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবং বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আগরতলায় এই রেল প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জমি হাতে পাওয়ার পর থেকে ৩০ মাসের মধ্যে রেললাইন তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বি এন ভাস্কর সাংবাদিকদের জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে ৯৭ কোটি রুপি রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে। জমি হাতে পেলেই রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। পূর্বপরিকল্পনামতো আগরতলা থেকে বাধারঘাট অবধি উড়াল রেলপথে হবে। এরপর চারিপাড়া থেকে মাটির ওপর দিয়ে রেল চলবে সীমান্তবর্তী নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত।
এই রেলপথ চালু হলে আগরতলা থেকে কলকাতার রেলপথের দূরত্ব কমে হবে ৫১৪ কিলোমিটার। বর্তমানে গুয়াহাটি হয়ে কলকাতা যেতে পাড়ি দিতে হয় ১ হাজার ৫৯০ কিলোমিটারের পথ। এই রেলপথ চালু হলে ত্রিপুরার মানুষ যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বাংলাদেশেরও পণ্য পরিবহনের নতুন বাজার খুলে যাবে। কারণ আগরতলা থেকে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ৫৪ কিলোমিটারে। আর ২১৩ কিলোমিটার হবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের। পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নতুন যুগের সূচনা করবে এই রেলপথ।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনের বাংলাদেশ অংশে ভূমি গ্রহণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশনের সিগন্যাল থেকে শুরু হয়ে ওই রেলপথ মনিয়ন্দের খারকুট থেকে ভারতের নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি দেবে।