আওয়ামী লীগ-জেএসএস সহাবস্থান চায় এলাকাবাসী
রাজবিলার জনপ্রতিনিধি ও পাড়াবাসীরা বলছেন, চৌকি স্থাপন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগে মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হচ্ছে। তারা দিনে পাড়ায় এলেও টার্গেট কিলিংয়ের ভয়ে রাতে বাড়িঘরে থাকার সাহস পাচ্ছে না। বিবদমান আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে আগের মতো রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
রাজবিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মং এনু মারমা বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ২৪ ঘণ্টা টহলে রয়েছে। তারপরও মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। লোকজন রাতে বাইরে অথবা নিরাপত্তা চৌকিসংলগ্ন বাড়িতে থাকে। এখন জুমের মৌসুম এবং রাবার বাগানে রাবার আহরণের সময়। আতঙ্কে ও মানসিক স্বস্তি না থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। এ অবস্থায় তাঁর ওয়ার্ডে ৭, ৮ ও ৯ নম্বরে তিনটি রাবার বাগানপাড়াসহ ১২টি পাড়ার ৩৭৮টি পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে।
রাবার বাগানের একজন কার্বারি (পাড়াপ্রধান) নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও টহল বাড়ানো প্রশংসনীয়। কিন্তু টার্গেট কিলিং ও অপহরণের পরিস্থিতিতে এ ব্যবস্থা কতটুকু নিরাপত্তা দেবে—এ নিয়ে মানুষ সন্দিহান। জেএসএসের ক্যাডাররা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এবং মগ পার্টি জেএসএসের নেতা-কর্মীকে টার্গেট করে অতর্কিতে হত্যা করছে অথবা নিয়ে যাচ্ছে। কোন সন্ত্রাসী দল কখন, কাকে টার্গেট করছে কারও জানার কথা নয়। এ জন্য মানুষের ভয় কাটছে না।
রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য অং প্রু মারমা বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছে জনপ্রতিনিধিরাও এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁর ইউনিয়নে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তাইংখালী, রাবার বাগান এলাকার মানুষ সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান সানুপ্রু মারমা বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ৫ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, নিরাপত্তাচৌকি ছাড়াও পাড়াগুলোতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক টহল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান জোরদার করেছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মানুষজনের আতঙ্ক কেটে বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ ও জেএসএসের নেতা, কর্মী–সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি হত্যা-অপহরণের ঘটনায় রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়নে এ রকম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ৭ মে থেকে এ পর্যন্ত উভয় দলের দুজন করে চারজনকে হত্যা ও জেএসএসের একজনকে অপহরণ করা হয়েছে। দলছুট আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) কিছু সদস্য ও স্থানীয় কিছু মারমা যুবক মগ পার্টি পরিচয়ে জেএসএস কর্মী–সমর্থককে ও জেএসএস ক্যাডাররা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা-অপহরণ করছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
সমাধান কোন পথে
রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক নেতারা বলেন, জেএসএস ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের আগেও এলাকায় সহাবস্থান ছিল। যে যার রাজনীতি করেছে। উভয় দলের মধ্যে সেই সহাবস্থান ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সশস্ত্র দলগুলো নিয়ে। তারা সহাবস্থানে থাকবে না। আওয়ামী লীগ ও জেএসএস উভয় দলই স্বীকারও করে না ওই সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার বিষয়টি।
এ ব্যাপারে জেএসএসের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলিমং মারমা বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী হলে সন্ত্রাসী দলগুলো দমন করা কঠিন কিছু নয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সঙ্গে জেএসএসের কোনো সমস্যা নেই। স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা জেএসএসকে বান্দরবান থেকে বিতাড়িত করার ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করলে সহাবস্থানও স্বাভাবিকভাবে এসে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। কোনো রাজনৈতিক দলকেও কোণঠাসা করতে চায় না। এলাকায় তৎপর সন্ত্রাসীদের দমন করা না হলে কোনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে না।