শরীয়তপুরের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জোর প্রচারণা চলছে। তবে মাঠে নেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা। হামলা-মামলার কারণে নির্বাচনের মাঠে নামতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা।
জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরের দুটি নির্বাচনী এলাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় ১৪৭ জন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদের (অপু) ওপর হামলা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এসব ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন।
শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন (কালু)। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন (অপু)। ফোন বিল বকেয়া থাকার অভিযোগে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান। এরপর আর তিনি প্রচারণায় সক্রিয় হননি। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ ভালো নয়। নেতা-কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে নেতারা আত্মগোপনে আছেন। তাই প্রচার–প্রচারণা চালাতে পারছি না। এলাকার বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাতে ঢাকায় অবস্থান করছি।’
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছি। এ আসনে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করা হচ্ছে না। তাঁরা কেন ভোটের মাঠে নেই, তা আমার জানা নেই।’
শরীয়তপুর–২ (নড়িয়া-সখীপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান (কিরন)। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। ১ ডিসেম্বর ওই আসনের সখীপুরের দক্ষিণ তারাবুনিয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মী–সমাবেশে ককটেল হামলার অভিযোগে মামলা করা হয়। এতে বিএনপির ২৭ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এরপর ২০ ডিসেম্বর নড়িয়া পৌরসভার মেয়র ও সখীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে দুটি মামলা করা হয়। নড়িয়ার মামলায় ২৫ ও সখীপুর থানায় দায়ের করা মামলায় ৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী সফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার সংসদ নির্বাচনে যাঁরা প্রচারণা চালাতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাকে এলাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে একটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক (শামীম) বলেন, ‘বিএনপি নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। দলটির নেতারা এলাকায় না এসে ফোনে ফোনে নালিশ জানাচ্ছেন। কোথায়ও তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপির প্রার্থীর কোনো জনসমর্থন নেই। তাই তিনি এলাকায় আসছেন না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমার নেতাদের ওপর তিন দফা ককটেল হামলা চালিয়েছেন।’
শরীয়তপুর ৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট-ভেদরগঞ্জের আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী নুরুদ্দিন আহম্মেদ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নাহিম রাজ্জাক। মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর সোমবার এলাকায় আসেন নুরুদ্দিন আহম্মেদ। মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরে যাওয়ার সময় তাঁর ওপর হামলা করা হয়। হামলায় তিনিসহ ২৬ জন আহত হন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী নুরুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা আমার ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে এলাকাছাড়া করার চেষ্টা করছেন। আমি যাতে প্রচারণা চালাতে না পারি, সে জন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছি। আল্লাহই জানেন, সুস্থ হয়ে কবে নির্বাচনী এলাকায় ফিরতে পারব।’
শরীয়তপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘কোনো প্রার্থীকে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার লিখিত অভিযোগ পাইনি। গোসাইরহাটে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। ওই ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চলছে।’